বেঁচে যাওয়া কেশব পাণ্ডে জানালেন বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্তের কথা

বেঁচে যাওয়া কেশব পাণ্ডে জানালেন বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্তের কথা

কেশব পান্ডে। যে কয়েকজন ভাগ্যবান কাঠমান্ডুতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় বেঁচে যান, তিনি তাঁদের মধ্যে একজন। নেপালের এই নাগরিক এখন কাঠমান্ডুর মেডিসিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কেশব পান্ডে পেশায় পর্যটনকর্মী। তিনি তাঁর ১১ সহকর্মীর সঙ্গে নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। গ্রাহকসেবা নিয়ে ৯ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি কর্মশালায় অংশ নিতে তাঁরা বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই কর্মশালাটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস।

 

কেশব এখন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা স্মরণ করেন। বেঁচে থাকাটা তাঁর কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হয়। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি স্মরণ করতে পারেন কেশব। বলছিলেন, ‘উড়োজাহাজটি কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের অবতরণের সময় দিক পরিবর্তন করতে লাগল। আমরা ভাবলাম, পাইলট হয়তো নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী এমনটি করছেন। হঠাৎ দেখি উড়োজাহাজটি ঘর, বাড়ি ও আশপাশের গাছপালা প্রায় স্পর্শ করে ফেলেছে। এ সময় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।’

 

বিমানের সব যাত্রী বুঝতে পারছিলেন তাঁরা ভয়ানক বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন। তবে শেষ মুহূর্তে তাঁদের একটু আশাও জাগে। কেশব বলেন, ‘আমরা সবাই বুঝতে পারলাম, আমাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু যখন আবার দেখলাম পাইলট উড়োজাহাজটি রানওয়ের বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন ভাবলাম আমরা বিপদমুক্ত। আমরা অবতরণের দুই মিনিট আগে একদম শান্ত হয়ে গেলাম। কিন্তু মুহূর্তেই একটি বিকট শব্দ আমাদের আশাহীন করে তোলে।’

 

ওই বিকট শব্দের পর কেশব আর কিছু স্মরণ করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত মনে করতে পারছি...। কিছুক্ষণ পর নিজকে আবিষ্কার করলাম আমি বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আমি উড়োজাহাজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু আমার পা আমার বাধা হয়ে দাঁড়াল। সৌভাগ্যবশত, এমন সময় নেপালি সেনাবাহিনীর সদস্যরা হামাগুড়ি দিয়ে আমাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসে।’ 

কেশবকে প্রথমে কাঠমান্ডু মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁর পরিবার তাঁকে মেডিসিটি হাসপাতালে নিয়ে আসে। তিনি ডান পা, পাঁজর ও চোখে আঘাত পেয়েছেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি বন্ধু ও উড়োজাহাজটিতে থাকা অন্য যাত্রীদের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

 

কেশব পান্ডে বলেন, ‘বেঁচে থাকার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু অনেক বন্ধুকে হারিয়ে হয়তো আমি নতুন করে জীবন পেলাম।’