গ্রামীণ ধাঁধা

গ্রামীণ ধাঁধা

"শুঁড় দিয়া কাজ করি, নাহি আমি হাতি।

পরহিতে খাটি সদা, তবু খাই লাথি।।"

এটি একটি ধাঁধা। এর মানে কী? আমরা একটু চিন্তা করি। দেখি এর মানে বলতে পারি কিনা। এর অর্থ ঢেঁকি। যারা ঢেঁকি দেখেছি তারা তো জানি, ঢেঁকি শুড় দিয়ে কাজ করে। আর ঢেঁকি চালাতে হয় পা দিয়ে।

এক সময় আমাদের দেশে ধাঁধার প্রতিযোগিতা হতো। দুই দল বা দুই জনের মধ্যে ধাঁধার প্রতিযোগিতা হতো। একজন বা একদল ধাঁধা বলত। অন্যজন বা অপর দল ধাঁধার উত্তর দিত। এভাবে প্রতিযোগিতা চলত। যে ব্যক্তি বা দল বেশি উত্তর দিতে পারত তারা জয়ী হতো।

এক সময় গ্রামে-গঞ্জে বিয়ের আসরে ধাঁধার প্রতিযোগিতা হতো। বিয়ের আসরে বর পক্ষ ও কনে পক্ষের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা চলত। দুই পক্ষই চাইত অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে। এভাবে জমে উঠত মজার খেলা। বিয়ের আসরে ধাঁধার খেলা দুই পক্ষকেই দিত বাড়তি আনন্দ। সবাই এ আনন্দ উপভোগ করত।

ধাঁধার একটি বৈশিষ্ট্য হলো ছন্দ। ছন্দ মিলিয়ে ধাঁধা ধরা হয়। আর ধাঁধার উত্তর হয় এক বা দুই শব্দে। একেক ধাঁধার এক এক উত্তর। কোনো ধাঁধা ধরা হয় ফল নিয়ে। কোনো ধাঁধায় লুকায়িত থাকে প্রাণী বা উদ্ভিদের নাম। কোনো ধাঁধা অক্ষর নিয়ে। কোনো ধাঁধায় থাকে অঙ্কের হিসাব। কোনো ধাঁধায় লুকায়িত থাকে মানুষের সম্পর্ক।

আগের দিনে মানুষ মুখে মুখেই ধাঁধা তৈরি করত। আর মানুষের মুখে মুখেই তা টিকে থাকত। একজন মানুষ অন্যের কাছ থেকে শুনে শুনেই ধাঁধা মনে রাখত। যেমন: দাদা-দাদি থেকে মা-বাবা ধাঁধা শুনেছে, আবার মা-বাবা থেকে শুনেছে ছেলে-মেয়েরা। মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এসব ধাঁধা তৈরি হতো।