পরিসংখ্যানটা লোভনীয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটির গুরুত্ব আরও বেশি। বিশ্ব ক্রিকেটে এমন ঘটনা আরও আছে ।সাদা চোখে আজকের ম্যাচটি স্রেফ আরেকটি ওয়ানডে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আরেকটা সিরিজ জেতার সুযোগ। কিন্তু আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে যে ওয়ানডে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এর মাহাত্ম্য এখানেই শেষ নয়। এটা বাংলাদেশের পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের এক সাথে খেলা শততম ম্যাচ হতে যাচ্ছে।
আজ এক সাথে ১০০তম বারের মতো খেলতে নামবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান।আজকের আগে এই পাঁচ খেলোয়াড় একসঙ্গে ৬৯টি ওয়ানডে, ২৯টি টি-টোয়েন্টি ও ১টি টেস্ট ম্যাচে খেলেছেন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে। বিশেষ এই ‘সেঞ্চুরিটি’ আরও আগেই পূর্ণ হতে পারত যদি ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ড এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচগুলো পরিত্যক্ত না হতো। এই পাঁচ ক্রিকেটারের একসঙ্গে খেলা প্রথম ম্যাচ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে, অধিনায়ক মাশরাফির প্রথম ও ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত সর্বশেষ টেস্ট হয়ে আছে যেটি।
পাঁচ মহারথীর পথচলা শুরু ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে, মূলত এই ৫ জনের মধ্যে সর্বশেষ অভিষিক্ত মাহমুদউল্লাহর অভিষেকের পর থেকেই। আর সেখান থেকেই যেন একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছে এ দেশের ক্রিকেট, বিশেষত সর্বশেষ চার বছরে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে চলমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম ম্যাচ পর্যন্ত খেলা ৫১ ম্যাচে ২৮টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, জয়ের হার ৫৪.৯০ শতাংশ।
এ তো গেল অঙ্কের হিসাব, অর্জনের কথা বললেও এই সময়কালেই সবচেয়ে সফল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে বা কেনিয়ার বিপক্ষে বাদে দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজেই প্রতিপক্ষের কাছে পাত্তা না পাওয়া দলটি ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এই পাঁচ পরশপাথরের স্পর্শে। বাংলাদেশের প্রতিটি সাফল্যেই এই পাঁচ ক্রিকেটারের কেউ না কেউ মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে দেশের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের কথাই বলুন বা ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা। এই পাঁচ ক্রিকেটারের সময়েই ২০১২ ও ২০১৪ এশিয়া কাপে ফাইনালে পৌঁছে একটুর জন্য শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের। গত বছর ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানো বাংলাদেশের কারিগরও মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বিশ্ব ক্রিকেটের ভয়ংকর সব প্রতিপক্ষকে সিরিজ হারানো দলটিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, পেছন থেকে সমর্থন পেয়েছেন বাকি চার সিনিয়র ক্রিকেটারের। হাঁটুর সব চোট উপেক্ষা করে বছরের পর বছর এভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আলোকিত পথে নিয়ে গেছেন তিনি। দেশের ক্রিকেটকে টেনে নেওয়ার ব্রতটা একইভাবে বুকের ভেতর লালন করে চলেছেন বাকি চার ক্রিকেটারও। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি তো এই সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরাই। মাশরাফির ওপর চোটের নির্মম অত্যাচার না থাকলে টেস্ট দলটিও পঞ্চপাণ্ডবে আলোকিত হতে পারত। এই পাঁচ ক্রিকেটারের ওপর প্রত্যাশার বিশাল চাপ বলেই বোধ হয় বারবার প্রশ্নটা চলে আসে, এঁরা চলে গেলে কীভাবে এগোবে দেশের ক্রিকেট? পঞ্চপাণ্ডবের শততম ম্যাচের মাইলফলকটা আরেকবার সামনে নিয়ে আসছে প্রশ্নটি।সেই উত্তর খোঁজার সময় হয়তো পাওয়া যাবে আরেকটু পরে। তবে এই মাইলফলককে আরেকটি বিষয় মনে করিয়ে দিচ্ছে। মাইলফলকের অনেকগুলো ম্যাচ জয়ে উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশ। সেটি শততম ওয়ানডেতে ভারতকে হারিয়ে হোক বা হোক মাশরাফির ২০০তম ওয়ানডেতে উইন্ডিজকে হারিয়ে।
 
                             
  
  
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
								 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					