জার্সিনামা জাতীয় ফুটবল দলের

জার্সিনামা জাতীয় ফুটবল দলের

 

আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচের শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের জার্সি বিনিময় খুবই পরিচিত দৃশ্য শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবেই ফুটবলাররা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের সঙ্গে জার্সি বিনিময় করে থাকেন ঘামে ভেজা জার্সির আড়ালে বিনিময় হয় বন্ধুত্ব, খেলোয়াড়েরা হৃদয়ের ফ্রেমে ধরে রাখেন দেশের হয়ে খেলার অবিস্মরণীয় স্মৃতি প্রতিপক্ষের সঙ্গে জার্সি বিনিময় না হলেও যে জার্সিটি পরে তাঁরা খেলেন, সেটিই হয়ে থাকে স্মৃতি, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার গর্বের নিদর্শন

জাতীয় দলের হয়ে পাওয়া জার্সিটি খেলোয়াড়ের নিজের সম্পত্তিএই ব্যাপারটা ভুল বাংলাদেশের ফুটবলে। খেলা শেষে প্রতিপক্ষ দলের সঙ্গে জার্সি বিনিময় দূরের কথা, খেলোয়াড়েরা নিজেদের ওয়ার্ডরোবে জাতীয় দলের জার্সি জমিয়ে রাখার সুযোগ পান না। ম্যাচ শেষেই যে এটি ফেরত দিয়ে দিতে হয়, সেটি দিয়ে খেলতে হয় পরবর্তী আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কোনো খেলোয়াড় যদি পরের ম্যাচে সুযোগ না পান, তাহলে সেই জার্সি উঠে যায় আরেক খেলোয়াড়ের গায়ে

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল বঙ্গবন্ধু কাপে যে জার্সি পরে খেলছে, সে জার্সি পরেই তারা খেলেছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। একই ডিজাইনের জার্সি চলছে, সেই ২০১৫ সাল থেকে। কোটি টাকার আয়োজন বঙ্গবন্ধু কাপ। স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ফুটবলাররা নতুন জার্সি কি পেতে পারে না? এটা তো তাঁদের অধিকারের পর্যায়েরই পড়ে!

পুরো ব্যাপারটি নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলারদের মধ্যে আছে চাপা ক্ষোভ। নাম প্রকাশ করতে চান না এমন একজন খেলোয়াড় বললেন,নতুন বা পুরোনো নয়, বাংলাদেশ দলের জার্সিটাই আমার কাছে সবচেয়ে সম্মানের। তবে স্বাভাবিকভাবেই নতুন জার্সি পরলে খুব ভালো লাগে। মনটা প্রফুল্ল থাকে। নতুন জার্সি পরে খেলার মজাই আলাদা। ছাড়া জাতীয় দলে খেলেছি, জার্সিটি নিজের বাড়ির আলমারিতে সাজিয়ে রাখতে তো ইচ্ছা হয়ই। কিন্তু সেটি সম্ভব হয় না। ভাবতে অবাক লাগে, জাতীয় দলে খেলছি এত দিন নিজের সংগ্রহে কোনো জার্সি নেই আমার।

সাফ ফুটবলেই বাংলাদেশ দলে ছিলেন ফয়সাল মাহমুদ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কাপের দলে সুযোগ মেলেনি তাঁর। ৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার ভবিষ্যতে আবার কবে জাতীয় দলে খেলবেন, আদৌ খেলবেন কি না, সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু ফয়সালের আফসোস ওই একই, ‘ সাফের দুই সেট জার্সি ঘরে নিয়ে ফিরতে পারিনি। টুর্নামেন্ট শেষে ফেডারেশন জার্সি রেখে দিলে কী আর করা!

জাতীয় দলের সাবেক এক ফুটবলার জার্সি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন। ঘটনাটা নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের। ফুটবলের তখন রমরমা অবস্থা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলতে জাতীয় দল জাপানে গিয়েছে। একটি ম্যাচ শেষে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় তাঁর কাছে এসে ধরলেন—‘তোমার জার্সি চাই। আমারটা নাও।বাংলাদেশ দলের সেই সাবেক ফুটবলার বিব্রত হলেন। নির্দেশ দেওয়া আছে, এই জার্সিই ধুয়ে পরের ম্যাচে খেলতে হবে। কিন্তু প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় নাছোড়বান্দা। তিনি নেবেনই। শেষে রীতিমতো পালিয়েইজার্সি রক্ষাকরতে হয়েছিল তাঁকে

জাতীয় দলের জার্সি নিয়ে ফেডারেশনের এইকিপটেমিএখন বরং আরও বেড়েছে। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ড থেকে জাতীয় দলের জন্য কেনা হয়েছিল দুই সেট জার্সি। যা দিয়ে নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছিলেন মামুনুল-এমেলিরা। এরপর সেই জার্সি দিয়েই অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে পাঠানো হয়ে ইরাকে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের বাছাইপর্ব খেলতে। সেবার কুয়েতের মতো দলকে হারিয়ে সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশের যুবারা। তারা সেই সাফল্যের স্মারক হিসেবে জার্সি রেখে দিতে পারেননি। একই জার্সি দিয়ে জাতীয় দল আবার নেপাল, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ আর জাপান যুব দলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছিল

একই ডিজাইনের জার্সি পরে তিন বছর ধরে জাতীয় দল খেলছে। কেবল জাতীয় দলই নয়, একই ডিজাইনের জার্সি পরে খেলছে বয়সভিত্তিক দলগুলোও। খেলোয়াড়দেরও তো ইচ্ছা করে নতুন জার্সি পরে খেলতে!

জার্সি নিয়ে বাফুফের এই অভাবনীয় কৃপণতার কোনো মানেই নেই। তাদের টাকার অভাব আছে বলেও শোনা যায় না। ফিফা এএফসির বার্ষিক অনুদানের বাইরে প্রতিটা টুর্নামেন্টের জন্যই মোটা অঙ্কের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ থেকেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিশ্চিত আয় এক কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের স্বত্বাধিকারী কে স্পোর্টস চুক্তি অনুযায়ী ৫০ লাখ টাকা বাফুফেকে ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন। ছাড়া টিকিট বিক্রির টাকাটাও যাবে বাফুফের কোষাগারে। তাহলে ফুটবলারদের ন্যূনতম চাহিদা নতুন জার্সি দিতে অবহেলা কেন বাফুফের।