যে ভুল বার্তায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর এই ট্র্যাজেডি

যে ভুল বার্তায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর এই ট্র্যাজেডি

ফ্লাই ফাস্ট-ফ্লাই সেফ’ স্লোগানে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ৭৬ আসনের দুটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-যশোর ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। দ্রুত আকাশপথে ভ্রমণ করুন, নিরাপদে ভ্রমণ করুন—আশ্বাস দিয়ে চলাচলকারী বিমানটিই গতকাল সোমবার অনেক প্রাণহানির কারণ হলো। ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষের দাবি, নেপালি কর্তৃপক্ষের রাডারের ভুল সংকেতের কারণে বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক নেপালি টাইমস কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে পাইলটের সর্বশেষ কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড হাতে পেয়েছে। এখানেও স্পষ্ট, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও পাইলটের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি চলছিল। এরই মধ্যে অডিও রেকর্ডটি ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে।

 

নেপালি এ পত্রিকা বলছে, কন্ট্রোল রুম থেকে ভুল বার্তা দেওয়ার কারণেই ককপিটে দ্বিধায় পড়েন পাইলট। রানওয়ে ০২ (দক্ষিণের শেষ প্রান্তের) ও রানওয়ে ২০ নিয়েই এ দ্বিধা। অডিও রেকর্ডের শুরুর দিকে শোনা যায়, কন্ট্রোল রুম থেকে ইউএস-বাংলার ক্যাপ্টেনকে সতর্ক করা হচ্ছে। এতে বলা হয়, ‘আমি আবারও বলছি, রানওয়ের ২০-এর দিকে এগোবেন না।’ পাইলটকে কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতেও বলা হয়। কারণ অন্য একটি বিমান অবতরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। পরে এটিসি পাইলটের কাছে জানতে চায়, তিনি রানওয়ে ০২ নাকি ২০-তে অবতরণ করতে চান। পাইলট জানান, ‘আমরা ২০ নাম্বার রানওয়েতে অবতরণ করতে চাই।’ তখন তাঁকে রানওয়ের শেষ প্রান্তে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে পাইলট আবার জানতে চান তিনি রানওয়ের নির্দিষ্ট এলাকায় আছেন কি না। তখন তাঁকে না করে দেওয়া হয়। এবার তাঁকে ডান দিকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এটিসি। পাইলট তাই করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘স্যার, আমরা কি অবতরণ করতে পারি?’ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর এটিসির নিয়ন্ত্রক চিৎকার করে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, বাঁক নিন…!’ এরপর কিছুক্ষণ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে টাওয়ারে আগুনের সংকেত আসে, যাতে পরিষ্কার হয় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

 

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ দাবি করেন, ‘কাঠমাণ্ডু এটিসি (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) টাওয়ারের পক্ষ থেকে গাফিলতি ছিল। তারা আমাদের পাইলটদের ভুল বার্তা দিয়েছে। সে কারণেই এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। রানওয়ের কোন দিক থেকে পাইলট অবতরণ করবেন তা তিন মিনিট ধরে আমাদের পাইলটকে দেওয়া হয়েছে। তাদের এই বার্তায় কনফিউশনের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা আমাদের পাইলটকে মিসলিড করেছে ভুল রানওয়েতে ল্যান্ড করার জন্য।’ পাইলটের সঙ্গে কাঠমাণ্ডু এটিসির কথোপকথনের তিন মিনিটের অডিওটি নেপাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।

 

এদিকে নেপালি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ইউএস-বাংলার বিমানটি ভুল পথ দিয়ে কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার চেষ্টা করছিল। নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক সঞ্জীব গৌতম কাঠমাণ্ডু পোস্টকে বলেন, ‘বিমানটি যখন রানওয়েতে নামার চেষ্টা করছিল তখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। রানওয়ের দক্ষিণ দিকে বিমানটিকে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বিমানটি নামছিল রানওয়ের উত্তর দিক থেকে। এই অস্বাভাবিক অবতরণের কারণ কী তা আমরা এখনো জানি না। ধারণা করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’

 

ইউএস-বাংলার সিইও ইমরান আসিফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের বিমানে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। এই এয়ারক্রাফটের বয়স ১৬ বছর। এ রকম আমাদের চারটি এয়ারক্রাফট আছে, যেগুলো ত্রুটি ছাড়াই চলাচল করছে। এই পাইলটের ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান জীবিত আছেন। তিনি এয়ারফোর্সের অভিজ্ঞ সাবেক পাইলট এবং তাঁর ফ্লাইং আওয়ার পাঁচ হাজার ঘণ্টার বেশি। শুধু এই এয়ারক্রাফটে উনি এক হাজার ৭০০ ঘণ্টার বেশি ফ্লাই করেছেন। একই সঙ্গে তিনি এই এয়ারক্রাফটের একজন ইনস্ট্রাক্টর।’ ইমরান আসিফ বলেন, ‘এটিসির কথোপকথন শুনে আমাদের মনে হচ্ছে, আমাদের পাইলটের কোনো গাফিলতি ছিল না।’