‘সাদা তেলের’ সন্ধানে সৌদি আরব

 ‘সাদা তেলের’ সন্ধানে সৌদি আরব

পায়ের নিচে পাহাড়ের গা এবড়ো-খেবড়ো হয়ে নেমে গেছে। পাহাড়ের নিচে ওই দূরে চকচকে বিশাল এক লবণের থালা যেন। ঘোরলাগা বিস্ময় নিয়ে ওই দিকে চেয়ে আছেন এক দল সৌদ তরুণ। তারা হাইকার, পাহাড়ি পথে রোমাঞ্চকর অভিযানে ছুটে যান। সৌদি আরবের হাইকারদের প্রথম প্রজন্ম বলা যায় এদের। ঘুরে ঘুরে এমন সব স্থানে তারা যাচ্ছে যেগুলো সৌদিকে পর্যটন স্বর্গের সন্ধান দিতে পারে।

 

বিশ্বের মানচিত্রে যত বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে তাদের মানচিত্রে ঠাঁই করে নিতে চায় সৌদি আরব। গ্লোবাল ট্যুরিজমে নতুন সদস্য হিসেবে নাম লেখা চলেছে দেশটি। খুব দ্রুত ট্যুরিস্ট ভিসা ইস্যু করতে তারা। মরুভূমির দেশটি এখন আর কেবল তেলের সন্ধানই করে না। তারা ‘সাদা তেল’ খুঁজছে। যা কিনা পর্যটন হিসেবে মাথাচাড়া দিচ্ছে। ক্রুড ওয়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পদে যোগ হবে ‘হোয়াইট ওয়েল’।

 

যদিও একটি ক্ষেত্রে পর্যটনের বিশাল এক ক্ষেত্রে সৌদি। মক্কা এবং মদিনায় লাখো মুসল্লি ভীড় করেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে। তাই পর্যটনব্যবস্থাপনার অনেক বিষয় সামলানোর অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে। কিন্তু দেশটিতে পোশাক পরিধান ও যৌনতার ক্ষেত্রে রক্ষণশীলতা গ্লোবাল ট্যুরিজমকে কতটা এগিয়ে নিতে পারবে তা চিন্তার বিষয়।

 

তবে এই মুহূর্তে সংস্কৃতির ঐতিহাসিক পরিবর্তনের হাওয়া চলছে দেশটিতে। এরই মাঝে আল ওয়াবাহ ক্রেটারের মতো আরো কিছু স্থানকে বিশ্ব পর্যটকদের জন্যে উন্মোচিত করতে চাইছে সৌদি আরব। দেশটিতে শীত মৌসুমের উষ্ণ বিকালে ট্যুর গাইড আমর খলিফা একদল সৌদ ক্যাম্পারদের নিয়ে হাজির হলেন তেমনই এক রোমাঞ্চকর স্থানে। পাথুরে বন্ধুর পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামার প্রস্তুতি নিলেন তারা। আল ওয়াবাহ দারুণ এক জায়গা। সল্ট প্যানে যাওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।

 

গাড়িতে জেদ্দা থেকে ৪-৫ ঘণ্টার পথ এই আল ওয়াবাহ ক্রেটার। আগ্নেয়গিরির হাতছানি পর্যটকদের কাছে টানতে সক্ষম। অবশ্য এখানে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা আর বেঁচে নেই। স্থানীয় লোককথা বলে, একটা সময় দুটো পর্বত একে অপরের প্রেমে পাগল হয়ে যায়। এদের একটা অপরটার সঙ্গে মিশতে নিজেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। অবশেষে মাঝখানে বিশাল এক গামলার আকৃতির বিষণ্নতা রেখে যায়।

 

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কর্তৃপক্ষ এখানে রাস্তা বানিয়েছে। দিক নির্দেশনা চিহ্নের মাধ্যমে স্থানটিতে যাওয়ার আগ্রহ জাগিয়ে তোলা হচ্ছে।

 

বড় সম্পদ

পর্যটন শিল্প সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ এর মধ্যে বড় স্থান দখল করে আছে। তেলের পর আরব অর্থনীতিতে এই সাদা তেল বা পর্যটনই বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। ক্ষমতাধর প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান এই বিষয়টি সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। গত আগস্টেই এই কিংডম মাল্টি মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট গ্রহণের মাধ্যমে লোহিত সাগরে বিলাসী রিসোর্টে পরিণত করার পরিকল্পনা গৃহিত হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ৫০টি দ্বীপ।

 

শত শত বছরের পুরনো মাদা’ইন সাহেল’র মতো আরো কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনাকেও পর্যটনবান্ধব করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুন করে ৩০ মিলিয়নে উপনীয় করবে বলে আশা রাখছে।

 

পর্যটন প্রধান প্রিন্স সুলতান বিন সালমান বিন আবদুলআজিজ গত মাসেই বলেন, এ শিল্পকে ফুলে-ফেঁপে নিতে এ বছরের প্রথম কোয়ার্টারেই ইলেকট্রনিক ভিসার ব্যবস্থা করা হবে। এই রাজ্য বিশাল সম্পদের ভাণ্ডার। আমরা কেবল তেল ব্যবসায়ী নই।

 

সৌদি সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলের নমুনাস্বরূপ বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সিনেমা দেখতে এখন কোনো মানা নেই। খেলার আয়োজনে নারী-পুরুষের বিধি-নিষেধ আর আগের মতো নেই। আগামী জুন মাস থেকে রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন নারীরা। তবে মদ বিক্রি নিষিদ্ধের বিষয়টি বিশ্ব পর্যটকদের হতাশ করতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ভ্রমণ বাধা দূর করে

গ্লোবাল ট্রাভেল এজেন্সি, যেমন ব্রিটেন-ভিত্তিক স্টেপস ট্রাভেল ইতিমধ্যে সৌদি ভ্রমনের বিভিন্ন প্যাকেজ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। তাদের মতে, সৌদি ট্যুরিজমের মধ্যে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এই শিল্পের মাধ্যমে সৌদির প্রতি মানুষের অনেক ভুল ধারণা বদলে যেতে পারে। সৌদি আরবের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন পর্যটকরা। এই শিল্প আরো বিকশিত হবে।