মা’কে নিয়ে এক সরকারি কলেজ শিক্ষকের হ্রদয় ছোঁয়া চিঠি

মা’কে নিয়ে এক সরকারি কলেজ শিক্ষকের হ্রদয় ছোঁয়া চিঠি

প্রিয় মা !
তুমি-হীন ১টা মাস কেটে গেল। যে সময়টাতে তোমাকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, ঠিক সেই সময়টাতে তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।


বিশ্বাস করো, তুমি-বিহীন প্রতিটা দিন মুহূর্ত বিষাদময়, প্রতিটি একাকিত্ব সময় হাহাকার অশ্রুসিক্তে ভরা। প্রতিটি রাত র্নিঘুম কাছে না পাওয়ার অতৃপ্ত যন্তণার। মা ! “তুমি কি ছিলে আমার”! তা প্রতিটি সেকেন্ডে উপলব্দি করছি। স্বর্গ আমি দেখিনি, তবে মা ! তুমি স্বর্গকে আমি পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, পৃথিবীটা এখনো স্বর্গ তাদের জন্য, এখনো যাদের মা বেঁচে আছে। আর আমাদের মত যারা অভাগা আছে তাদের জন্য নরক। পৃথিবী নামটা যদি কখনো হারিয়ে যায় অথবা মুছে যায়, তখন পৃথিবীর অন্য নাম হবে মা

 

মা, মাগো ! আমার খুব ইচ্ছে করে তোমাকে সাথে নিয়ে একটা মুহূর্ত ফিরে পেতে, তোমাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে, মা বলে ডাক দিতে, হবে কি মা সেই সুযোগ? আজ বুঝি, পৃথিবীর সকল সন্তানের হৃদয়পূর্ণে কেন থাকে মাতৃভক্তিতে। আমি অনেক ভেবে দেখি, ঠিক আমি কি করলে তোমাকে সাথে নিয়ে আরো একবার, একটি সকাল, একটি মুহূর্ত ফিরে পাবো? তোমাকে আবারও ফিরে পাওয়ার সব যুক্তির কাছে যখন আমি হেরে যায়, তখন একটা আর্তনাদ অশ্রু ছাড়া কিছুই থাকেনা। তোমাকে নিয়ে একটি মিনিট ফিরে পেতে চাই। আমি জানি, আমার হাহাকার কষ্টটা শুধুমাত্র তারাই বুঝবে যাদের মা নেই। আজ ৭২০টি ঘন্টা কেটে গেল চোখের জল হ্নদয়ের রক্তক্ষরণে। বিশ্বাস করো মা ! আজ আমি অনেক কিছুতেই স্বয়ং-সম্পুর্ণ, অভাব নেই, অভাব শুধু তোমার

 

মা ! তুমি-বিহীন আমি আজ একেবারে নিঃস্ব, গরিব অসহায়ত্ব বোধ করি সবসময়। আজও দুচোখেভাসে ঢাকা মেডিক্যালের সেই মুহুর্তের কথা। তোমার মাথার পাশেই বসা আমি, মুহুর্তের মধ্যেই অন্য-রোগীর দিকে তাকিয়ে, তোমার দিকে তাকাতে-নাতাকাতেই যেন ওপারে চলে গেলে। অতঃপর... সেই সাদা কাপনে মোড়ানো দৃশ্যটি কতই বর্বর নিষ্ঠুর ছিল। সেইদিনই সব স্বপ্ন কাচেঁর মত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেয়েছিল। সেইদিন মনে হয়েছিল আমি তোমাকে ছেড়ে হয়তো বাচঁবোনা, সেদিন সন্ধ্যার আকাশ ভারি হয়েছিল কান্নার আহাজারিতে কিন্তু তুমি জেগে ওঠোনি কিংবা সাড়া দাওনি। অথচ আমি না খুব নিষ্ঠুর হয়ে বুকে পাথর বেঁধে এখনো তোমাকে ছাড়া বেচেঁ আছি। এই তো আমি !!!

 

মা ! তুমি ছিলে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা,আদর্শ সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক তোমার আবেগি কন্ঠের ডাক শুনে পুলকিত হয়ে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতাম। তোমার স্পর্শে দেহ মনে আনন্দের শিহরণ জেগে চরম সহানুভূতির সৃষ্টি হতো। তোমার মুখের সহজ-সরল প্রান্তবন্ত হাসি ছিল সকালের সদ্য ফোটা ফুলের মতো। যা দেখে মনের কালো মেঘ নিমেষেই উধাও হয়ে যেত। পাশাপাশি তোমার আদর ছিল অসম্ভব সুন্দর। যেন কাশফুলের নরম ছোয়া। মায়ের সাবলীল কথা হৃদয়ে অনেক তৃপ্তির আভা এবং আলো ছড়িয়ে দেয়। তোমার কথা মনে পড়লে দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। হৃদয়ে বয়ে যায় বেদনার অফুরন্ত আবাহন

 

শোন মা ! এখনো প্রতিদিন সকাল, সন্ধ্যা, রাত আসে, তবে শুধু তুমি থাকনা। এখনো অনেক ফোন আসে কিন্তু তোমার কন্ঠ শুনতে পায়না। এখনো তোমার রোপন করা বাড়ির আম, জাম, কাঁঠাল, পেপে, পেয়ারা, জাম্বুরা, নারিকেল, কামরাঙ্গা কিংবা বরই আসে। আসে শিম, লাউ কিংবা অন্যান্য শস্যাদি, আর তাদের ফুলগুলো ফুটে সৌরভ ছড়ায় কিন্তু তুমি নেই! শুধু আমি নই, তোমাকে ভীষণ মিস করে তোমার লাগানো বৃক্ষরাজী তথা ফুল-ফলগুলোও। মিস করে তোমার সব ছেলে-মেয়ে, নাতি-পতিরাও। ভীষণ মিস করে, তোমার পাড়া- পড়শি, আত্নীয়-স্বজন কিংবা শুভা-কাংখীরাও। তোমার তিন বছরের নাতি তাশফিন, মোবাইল কানে নিয়ে বলে উঠে...ডাডু টেমন আছ ? (দাদু কেমন আছো ?) পান খাবো ! প্লিজ...বাছায় (বাসায়) আছ !... তখন বুঝ আমার মনের অবস্থা ??? মা_মাগো_আর_পারছিনা...!

তুমি, ওপারে খুব ভালো থেকো মা, আর আমিও একদিন ঠিকই তোমার পায়ের নিচে চিরতরে ঘুমোতে আসবো !

 

#উল্লেখ্য এই চিঠিটি fecebook  এর  Tajul Islam Taj …ID থেকে নেয়া। তিনি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক।