লিটনের ফ্ল্যাট- মুহাম্মাদ এফ রশিদ সজীব

লিটনের ফ্ল্যাট- মুহাম্মাদ এফ রশিদ সজীব

কল্যাণপুরে রোড ক্রস করতে দিয়ে অনেকদিন পর দেখলাম সেই পুরনো ঝিলিক। রিমাকে দেখলাম।একরোখা হয়ে রাস্তা পেরোচ্ছিলো।মাথার উপর তখন মধ্যদুপুরের রোদ অভিশাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে।বাম হাতে ওড়নাটা ধরে আনমনা হয়ে মুখটা মুছে নিচ্ছিলো।ডান হাতে বাজারের ব্যাগ।নিশ্চয়ই সংসার করছে।সব মেয়েদেরই একটা বয়সে এসে সংসারি হয়ে উঠতে হয়। হোক সে প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ে। পেঁয়াজ রসুন কেটে তরকারি তো রান্না করাই লাগে। সংসার জীবনের এক অদ্ভুত বাস্তবতা এটা। রিমাকে খুব সুন্দর লাগছিল।আমি খানিক সময়ের জন্য আমাদের অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম। কলেজ জীবনে সবচেয়ে কাছের মানুষটা যে ছিল সে এই রিমি। খুব ভালোবেসেছিলাম তাকে। বলা যায় পাগলের মতো। কি না করেছিলাম তার জন্য। হাত কেটেছি। রিক্সার পেছন পেছন দৌড়েছি।বাবার কাছে মার খেয়েছি। অবশেষে কলেজ থেকে টিসিও খেয়েছি এই রিমার জন্য। টিসিটা অবশ্য অন্যকারনে দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। রিমা আমার সন্তানের মা হতে চলেছিল। হা কথাটা সত্য। বয়েসই বা তখন কত ছিল? ১৭/১৮? কি বুঝতাম আমরা? টীনেজ লাভ। সব কিছুই কেমন রোম্যান্টিক লাগতো। সুযোগ পেলেই রিমাকে নিয়ে চলে যেতাম মিরপুর বেড়িবাঁধে। তারপর? সেই নিষিদ্ধ ভালোলাগা ভালোবাসা। কোকিল পাখির মত ঠুকরে ঠুকরে খেতাম ওর ঠোট, গাল, স্তন। বিশাল আকারের ডবকা স্তনের মাইক ছিল রিমা। এক নদী যমুনার জলের জলাধার ছিল এটা। আমার প্রিয় অংগ।মনের চাহিদার চেয়ে শরীরের চাহিদায়ই রিমাকে খুব কাছে টেনে নিতাম আমি। তবে ভালো যে বাসিনি তা নয়। খুব ভালোবেসেছি ওকে। একবারতো বিষ খেয়ে সুইসাইড করতে নিয়েছিলাম আমি। কতোটা স্টুপিড ছিলাম তখন। ভাবতেই কেমন নিজের উপর রাগ চলে আসে। এখন অনেকটা শান্ত হয়েছি। একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছি। বেশ ভালো অংকের বেতন পাই। তবে মনে কোন শান্তি পাইনা। এই জীবনে আর বিয়ে করা হয়নি আমার। ভিড় ঠেলে ওর সামনে গিয়ে দাড়াই।

ভালো আছো রিমা? কথাটা বলতেই কেমন চমকে উঠলো সে। ডানে বায়ে মুখ করে খুজলো।

 

 

এইতো আমি। এইখানে।

ছোট ছোট চোখ করে আমার দিকে তাকালো সে। মনে হয় চোখে কম দেখে।

আমাকে চিনতে পেরেছো?

ওড়নাটা দিয়ে মুখটা ভালো করে মুছে বললো

তোমাকে ভুলি কিভাবে? তুমি কি ভুলে যাবার মতো কেউ?

যাক মনে আছে তাহলে।

এ কি হাল তোমার?

কেমন হাল?

এইতো কমপ্লিট গৃহিণী।

হতেই হতো এর নইলে ওর। হয়ে গেছি একজনের।

ওর কথায় তেমন কোন রিএকশন দেখলাম না। সব কিছুই কেমন জানি বদছে গেছে। ওর কথা। হাটা চলা। তাকানোর ভঙ্গি। তবে স্মৃতি গুলো আগের মতোই আছে।

বাজার করেছো বুঝি?

হ্যাঁ ।

এদিকেই থাকো নাকি?

আছি এদিকেই বিয়ের পর থেকে।

তুমি কোথাথেকে?

যাচ্ছিলাম এদিক দিয়েই। আগের ঠিকানাতেই আছি। ৩৭ কৃষ্ণকান্ত রোদ, শ্যাওড়াপাড়া।

বেশ।

সময় আছে? বসবে কোথাও?

আজ না। অন্য আরেকদিন।

এড়িয়ে যাচ্ছো?

না।

তোমার ফোন নাম্বারটা দিয়ে যাও।

ফোন নাম্বারটি দিয়ে হনহন করে হেটে চলে গেলো রিমা। ওর হাটার স্টাইলটাও কেমন বদলে গেছে। কেমন মহিলাদের মতো এবড়ো থেবড়ো ভাবে হাটে। পাছার চর্বি গুলো কেমন স্প্রিং এর মতো ঝুপ ঝাপ করে লাফায়। এক মণ চর্বি জমিয়ে ফেলেছে। আমি পেছনে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম। আর আগের কথা মনে করছিলাম।

 

নীচের কেঁচি গেটটা ঠেলে ছোট ছোট সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলাম। তিনতলার বা পাশের বাসাটা আমার। এখানেই থাকি । রুমে ঢুকে কাপড় ছেড়ে গোছলটা সেরে নিলাম। দুপুরের খাবারটা খেয়ে পত্রিকা নিয়ে বসলাম। হুট করে কিভাবে যেন মোবাইলটা হাতে নিতেই রিমার নাম্বারে ডায়াল করে বসলাম।

হ্যালো

কে?

আমি, আরিফ।

কেন ফোন দিয়েছো?

দিলাম এমনি। তোমার সাথে কথা বলতে।

কেন বিরক্ত করছো আরিফ? তোমাকে ভুলে এসেছি ১০ বছর আগে। আবার কেন আমার জীবনে এসেছো? আমাকে বাঁচতে দিবেনা তুমি?

কথাটা শুনে খুব যে কষ্ট পেয়েছি তা কিন্তু নয়। বরং আমার জন্যেই আজ মেয়েটীর এই অবস্থা।

কেমন আছো তুমি?

বেশ আছি, খুব ভালো আছি। আমাকে ভালো থাকতে দাও তুমি। আমাকে আর দয়া করে ফোন দিও না।

কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলো রিমা। আমি আর কিছু বলতে পারিনি। আসলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি ও। কত কথা জমিয়ে রেখেছিলাম। কত কিছু বলার ছিল। ওকে একবার সরি বলার জন্যে হলেও ওর সাথে আমার খানিকটা সময় বসা দরকার। আচ্ছা ও যদি বিরক্তই হতো তাহলে একবার চাওয়াতেই ওর ফোন নাম্বার কেন দিলো? এসব নানা ধরণের প্রশ্ন এসে মাথাটা হ্যাং করে দিলো আমার। নাহ। কিছু ভাবতে পারছি না। ঘুমিয়ে পড়লাম।

 

তার বেশ মাস খানেক পর। আমি অফিসে। কাজের চাপে মারাত্মক ব্যস্ত।হুট করে একটা ফোনে কেঁপে উঠলো মোবাইলটা। আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম রিমার ফোন। ফোনটা রিসিভ করলাম না। সাইলেন্ট মুডে দিয়ে রেখে দিলাম ডেস্কের উপরে। কাজের অনেক চাপ। কথা বলার মতো সময় নেই। ঠিক করে রাখলাম বাসায় গিয়ে কথা বলবো। সেদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। গোছল করে খেয়ে খুব ক্লান্তি লাগছিল তাই আর ওকে ফোন দিতে পারিনি। আর আমার মনেও ছিলনা ওর ফোনের কথা।

 

আমার ইদানীং স্মৃতি শক্তি খুব লোপ পেয়েছি। কিছুই মনে রাখতে পারিনা। অফিসের কলিগেরা ঠাট্টা করে গাজনি ডাকে। আমার অবশ্য ভালোই লাগে নামটা। ডাকুক না মন্দ কিসের। সুন্দর তো। মদ খাওয়ার একটা দারুণ বাজে নেশা হয়েছে আমার ইদানীং। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে বারে গিয়া মদ না গিললে যেনো পেটের ভাত হজমই হয় না আমার। আর সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার নিষিদ্ধ পল্লির নিষিদ্ধ নারীদের নিয়ে ফুর্তি করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। সংসার নেই। খরচা নেই। যা মাইনে পাই তা এভাবেই উড়িয়ে বেড়াই। কেউ না করার মতো ও নেই। এই তো বেশ চলে যাচ্ছে দিন।

সেদিন রাতেও রিমার ফোন এলো। আমি খেলায় মত্ত। রঙ্গ লীলা খেলা। যে খেলার শুরুটা সেই কবে কেউ বলতে পারবে না। সারা রাত ধরে খেলেছি সেদিন। রিমার ফোন টের পাইনি।

 

তার ঠিক দুই দিন পর। কি যেন ভেবে মোবাইল ফোনটা বের করলাম। মোবাইলটা দেখে আমি এতোই অবাক হয়েছিলাম যে দিশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। ৩০ টা মিসড কল। তাও রিমার। আমি ভাবতে শুরু করলাম জরুরি কিছু? ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করবো কি হয়েছে?

হ্যালো রিমা

হ্যাঁ

ফোন দিয়েছিলে আমি টের পাইনি

কত দিন টের পাওনি?

জানি না।

আনুমানিক বলো

মোবাইলের কল লিস্ট তো বলছে সাত দিন

জরুরি কিছু? কিছু হয়েছে তোমার? সুস্থ আছো তো?

হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। দেখা করতে পারবা?

কোথায়?

জানিনা।

চলে আসো?

কোথায়?

আমার বাসায়।

আসছি।

বলে ফোনটা রেখে দিলো রিমা। আজ বহু বছর পরে রিমা আসবে আমার বাসায়। আমি তো ভাবতেই পারছি না। সেই রিমা। সাদা কলেজ ড্রেস পড়ে আমার হাত ধরে হেটে বেড়িয়েছে সারা শহর। যার কাথে মাথা রেখে আকাশের তারা গুনেছি। সুযোগ পেলে চুমু খেয়েছি সেই রিমা। আজ আবার আমার বাসায়। আমি ঘর গুছালাম। বিছানা গুছালাম। এয়ার ফ্রেশ্নার দিলাম। হটাত করেই কলিং বেলটা বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই দেখি রিমা দাড়িয়ে আছে দরজার বাহিরে। সে ধীরে ধীরে আমার ঘরে ঢুকলো। গাউন রঙ্গের শাড়ি পড়া। শাড়ীর আচলের ফাক দিয়ে ওর পেট দেখা যাচ্ছে। চর্বিসহ সেই পেট। সে এসে বসলো আমার খাটে। আমিও বসলাম তার পাশে। কোন কথা না বলেই হামলে পড়লাম ওর ওপর। খাবলে খাবলে খেলাম ওর বুক পেট স্তন ঠোট। সেই স্বাদ। যে স্বাদ আমি পেয়েছিলাম কলেজ জীবনে। আর কোথাও পাইনি কখনো। রিমাকে নিয়ে খেললাম । টানা এক ঘন্টা খেললাম। অবশেষে থামলাম আমরা। আসলে এতো বছর পর কাছাকাছি পেয়ে কেউই নিজেকে সামলাতে পারিনি। আমি যে জোর করেছি তা নয় রিমাও সঙ্গ দিয়েছিল আমায়। সেদিনকার মতো চলে গেলো সে। আমিও খুশী মনে রইলাম।

তার বেশ কিছু দিন পর সে আবার এলো। এবার দরজা খুলতেই দেখি রিমা দাড়িয়ে আছে। সাথে একটা লোক। ৩৫/৪০ বছরের একটা লোক। আমাকে ভেতরে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে এলো সেই লোক। আমি শুধু একটা কথাই শুনলাম

এই সে, যে আমার সন্তানের বাবা। এই সেই লোক যে আমার জীবনটা নষ্ট করে ফেলেছে। তারপর আমি উঠে দেখি আমার মৃত দেহ পড়ে আছে মেঝেতে। আমাকে ঘিরে রেখেছে অনেক লোক। পুলিশ এসেছে। তদন্ত চলছে।