সূর্যকে গিলতে চলেছে চন্দ্র, আগামী ৩১ জানুয়ারি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ

সূর্যকে গিলতে চলেছে চন্দ্র, আগামী ৩১ জানুয়ারি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ

এবারের পূর্ণিমায় সূর্যকে গিলতে চলেছে চন্দ্র। এবারের সূর্যের তেজে পুড়ে নিজের শরীরকেই বদলে ফেলবে চাঁদ। আগামী ৩১ জানুয়ারি হতে চলেছে ইতিহাসের বিরল সাক্ষী এক পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। আধুনিক কালে দ্বিতীয় দফায় প্রায় ১৫০ বছর পর ঘটতে চলেছে এই বিরল ঘটনা। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে এই জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করা না গেলেও সে সুযোগ মিলবে এবার বাংলাদেশ থেকে। নিঃসন্দেহে যারা মহাকাশ সম্পর্কে আগ্রহ রাখেন, তাদের কাছে আগামীর এই চন্দ্রগ্রহণ অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। শুধু বিজ্ঞানি মহলে নয়, আমজনতাও আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে এই বিরল দৃশ্য দেখার জন্য।

 

আরও মজার বিষয় হলো সারা বিশ্বের মানুষই কিন্তু দেখতে পাবেনা এই গ্রহণ। মহাকাশের এই ট্রিট এবার শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ সহ মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জন্য। ভৌগলিক কারনের জন্যই বাকি বিশ্বকে এবারের মতো শুধু খবরের কাগজে ছাপা ছবি দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

 

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইতিমধ্যেই একবার ফুল মুন বা পূর্ণিমার দর্শন পেয়েছে সবাই। এবার সেই একই ঘটনা ঘটতে চলেছে দ্বিতীয় দফায়। তবে এবারের ফুল মুন হিসেব নিকেশে একেবারেই আলাদা। কারণ এবারের পূর্ণিমায় সূর্যকে গিলতে চলেছে চন্দ্র। এবারের সূর্যের তেজে পুড়ে নিজের শরীরকেই বদলে ফেলবে চাঁদ। নিজের চিরাচরিত চাঁদনিকে ভুলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করবে পৃথিবীর এই উপগ্রহ।

 

আগামী ৩১ তারিখ হতে চলা এই গ্রহণ এর আগে ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ৩১ মার্চ, ১৮৬৬ সালে। তাই মহাকাশ যাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, তাদের কাছে এই চন্দ্রগ্রহণ যে ‘ওয়ান্স ইন আ লাইফ টাইম চান্স’, তা নিশ্চয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর শুধু তাই নয়, যদি একটু মনে করার চেষ্টা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন বাকি চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের গায়ের রং এভাবে কখনই বদলে যায় না, যা এবার ঘটতে চলেছে এবং পূর্ণিমা হওয়ার কারণে ব্যাপক স্পষ্টভাবে তা দেখা যাবে। বিজ্ঞানীরা তো মজা করে বলছেন এবারের গ্রহণটি দেখার সময় মনে হবে যেন ৭০ এম এম স্ক্রিনের সামনে বসে সমগ্র ঘঠনাটি উপভোগ করছেন।

 

আপনি যদি এই বিরল মুহূর্তের ছবি তুলে রাখতে চান, তাহলে চাঁদের নিচের অংশে ফোকাস করতে ভুলবেন না যেন!

বিজ্ঞানিরা জানাচ্ছেন পুরো ঘটনাটি ঘটবে ৭৭ মিনিট ধরে। পৃথিবীর দক্ষিণ ছায়াবৃত্ত থেকে চাঁদ ধীরে ধীরে নিজের স্থান পরিবর্তন করতে শুরু করবে এবং এক সময়ে গিয়ে গিলে ফেলবে সূর্যকে। আর যখনই এমনটা হবে, তখন সূর্যের প্রভাবে বদলে যাবে চাঁদ! শুধু তাই নয়, গ্রহণের সময় চাঁদের নিচের অংশ বেশি উজ্জ্বল দেখাবে উপরের অংশের তুলনায়।

 

বিজ্ঞানিদের মতে ৩১ তারিখ পৃথিবীর অবস্থান এমন হবে যে প্রশান্ত মহাসাগর চাঁদের দিকে মুখ করে থাকবে এবং গ্রহণটি হবে সন্ধ্যার পর। যে কারণে মধ্য এবং পূর্ব এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দারা সুন্দরভাবে এই সূর্যগ্রহণ দেখার সুযোগ পাবেন এবং পুরো ঘটনাই ঘটবে সান্ধ্যকালীন সময়ে। আলাস্কা, হাওয়াই এবং উত্তর-পশ্চিম কানাডার বাসিন্দারাও একেবারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই বিরলতম চন্দ্রগ্রহণটি প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। আর বাংলাদেশের আকাশে এই বিরল ঘটনা ঘটতে শুরু করবে সন্ধ্যার সাড়ে পাঁচটার দিকে।

 

চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণের জন্য বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি সারাদেশ থেকে পূর্ণচন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। ঢাকার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫টা ৩৭ মিনিটে চাঁদ দিগন্তের উপরে উঠবে। সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে আংশিক গ্রহণ শুরু হবে। সন্ধ্যা ৬টা ৫১মিনিটে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে।

 

পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের মধ্যবর্তী অংশ ৭টা ২৯শ মিনিটে সংঘটিত হবে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ সর্বমোট ১ঘন্টা ১৬ মিনিট স্থায়ী হবে। রাত ১০টা ৮ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণের উপচ্ছায়া পর্যায় শেষ হবে।

এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করার জন্য অনুসন্ধিৎসু চক্র নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার গ্রীন মডেল টাউন মান্ডায়।

 

আকাশ পরিষ্কার থাকা সাপেক্ষে ক্যাম্প শুরু সন্ধ্যা ৫টা ৪৮মিনিট থেকে। গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

 

এই জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যাম্পে ৮ইঞ্চি স্মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ থাকবে।

 

এই ক্যাম্প থেকে ছবি ও বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ঢাকার বাইরের জেলায় অনুসন্ধিৎসু চক্রের উদ্যোগে চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের ব্যবস্থাও করবে অনুসন্ধিৎসু চক্র।