অফিসে ঢোকার পর যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত

অফিসে ঢোকার পর যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত

সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের ব্যস্ততার মাত্রা কয়েকশ’ গুণ বেড়ে গেছে। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে মানুষ নিজেকেও যন্ত্রের ন্যায় ব্যবহার করতে চায়। আর তাতে করে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ। প্রতিদিনের জীবনে কেবল কাজ আর কাজ। কাজের বাইরে যেন জীবনকে চিন্তাই করতে পারে না নগরবাসীরা।

 

অথচ এই কাজের ফাঁকেই নিজেকে কিছুটা হলেও মুক্ত রাখা দরকার। কেউ একজন হয়তো প্রতিদিন অফিসে ঢুকেই কাজের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কিন্তু তাতে করে অফিসের কতটা লাভ হয় তা ভাবার আগে নিজের কতটা ক্ষতি হচ্ছে তা চিন্তা করা আবশ্যক।

 

অফিসের প্রথম মিনিট দশেক কিন্তু মোটামুটি আমাদের বাকি দিনটার শরীর স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে দেয়। আগামী আট ঘণ্টাকে পারফেক্ট চাপমুক্ত করার জন্য শুরুর কটা মিনিট কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া ভীষণ জরুরি। দিন শুরু হওয়ার আগেই নিজেদেরই কয়েকটা ভুলে ঘোলাটে হয়ে যায় পুরো দিনটাই। আর তাই জীবন যতই যান্ত্রিক হোক নিজেকে সচল রাখতে এবং ইতিবাচক চিন্তা চেতনার জন্য নিচের বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

 

অফিসে যে ভুলগুলো আমরা প্রায়শই করে থাকি তার এক ঝলক নিজে ব্রেকিংনিউজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

 

১. দেরি করে অফিসে আসা

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সমস্ত কর্মচারীরা অফিসে আসতে প্রায় রোজই দেরি করেন বসেরা ধরেই নেন, কাজের প্রতি সেই কর্মচারীরা যথেষ্ট মনোযোগী নন। তারা সারাদিন যতই কাজ করুন না কেন, অফিসে যতক্ষণই থাকুন না কেন বদলায় না বসেদের মনোভাব। বছরের শেষে কপালে জোটে কম রেটিং। পাশের সহকর্মী সঠিক সময়ে অফিসে ঢুকে আপনার থেকে ঢের কম কাজ করেও পিঠচাপড়ানি পেলে, সত্যি বলুন তো, ভাল লাগে কি? তাই একটু অভ্যাস বদলান। নিজের স্বার্থেই জলদি অফিসে ঢোকার চেষ্টা করুন।

 

২. সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার

সকাল বেলা অফিসে এসেই অনেকে মুখটা প্যাঁচা করে রাখেন। পাশেই বসা সহকর্মীর সঙ্গে একটু হাসি বিনিময় করতেই যেন গুচ্ছ অনীহা। এমনটা করলে কিন্তু সহকর্মীদেরও আপনার প্রতি বিরক্তি বাড়বে। দরকারে আপনাকে একটু সাহায্য করতেও তারা ৫ বার ভাববেন। দিনটা শুরু করুন পাশের মানুষটিকে ছোট্ট ‘হাই’ বা মিষ্টি এক টুকরো হাসি দিয়ে। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশেই কিন্তু কাজের গতি তরান্বিত হয়।

 

৩. কফি দিয়ে কাজের শুরু

কাজে এসেই চারপাশে একটুও না তাকিয়ে ছুটলেন ধোঁয়া ওঠা কফির কাপের দিকে। গবেষণায় জানা গেছে- সকাল সাড়ে ৯টার আগে কফি খাওয়া এক্কেবারে উচিত না। সকাল ৮টা থেকে ৯টায় স্ট্রেস হরমোন কর্টিজল সবথেকে বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময়ে কফি খেলে কর্টিজলের কর্মক্ষমতা কমে, সারাদিন ক্যাফেনের প্রতি আসক্তি তীব্র হয়। অতএব মন যতই ছুটুক, সাত সকালেই কফির সঙ্গে আড়ি মাস্ট।

 

৪. ইনবক্সে প্রতিটা ই-মেলের জবাব দেয়া

সকালে অফিসে এসেই কম্পিউটার অন করে মেল বক্স খুলেই একের পর মেলের উত্তর দিতে শুরু করে দেন অনেকেই। একবার এ চক্করে ফেঁসে যাওয়া মানেই গেল বাকি দিনটা। আসলে এখানে এসে যায় প্রায়োরিটির প্রসঙ্গ। সকালবেলা মেল বক্সে গুরুত্ব বুঝে কোনো মেলের জবাব দেয়া উচিত। এক সঙ্গে এক গাদা অপ্রয়োজনীয় কাজ করেই যাবেন, অযথা সময় নষ্ট হবে, হবে খামোখা খাটুনি। সিলেক্টিভ হতে শিখুন। আপনার এবং সংস্থার, উভয়েরই তাতে লাভ হবে।

 

৫. সিডিউল ঠিক না করেই অফিসে আসা

আমরা অনেকেই রোজ অফিসে যাই কিন্তু একেবারে দিক্‌ভ্রান্ত হয়ে। মাথাতেই থাকে না আজ অফিসে গিয়ে কী করব, অফিসে এসেই তখন একগাদা কাজের মাঝে ডুবে যায়। কোন কাজটা আগে করব, কোনটা পরে তা ভাবতে ভাবতেই দিন সাবার। এ রকমটা ভুলেও করবেন না। অফিসে ঢোকার আগেই মোটামুটি সে দিনের দিনপঞ্জিটা মোটামুটি ছকে নিন মনে মনে।

 

৬. সহজ কাজটা আগে করুন

অফিসে এসেই যদি তড়িঘড়ি সহজ কাজটা আগেই করে নেন, তা হলেই গণ্ডগোল। পরে কিন্তু কঠিন কাজ করার আর এনার্জি থাকবে না। দিন যত গড়াবে স্বভাবিক ভাবেই ক্লান্তি বাড়বে। তখন কঠিন কাজ উদ্ধার করতে ঘাম ছুটবে। তার চাইতে বরং কঠিন কাজ দিয়েই দিনের শুরু হওয়া ভাল। তখন পর্যাপ্ত এনার্জি পাওয়া যায়। কঠিন কাজ সহজেই হয়ে যায়।

 

৭. মাল্টি টাস্কিং

যেহেতু দিনের শুরুতে এনার্জি তুঙ্গে থাকে, তাই আমরা অনেকেই ভাবি সেই এনার্জির হাত ধরে অফিসে এসেই একগাদা কাজ করে ফেলতে পারব। গবেষণা কিন্তু ঠিক উল্টো কথা বলে। শুরুটা করুন আস্তে আস্তে, এক এক করে।

 

৮. নেগেটিভ চিন্তা

একগাদা নেগেটিভ চিন্তা নিয়ে অফিসে ঢুকলেই বাকি দিনটা নেগেটিভ থাকবে। মন যতই খারাপ থাকুক অফিসে আসুন মনটা হালকা করে। আজ কিছু করতে ভাল লাগছে না ভাবলেই কিন্তু সব গোলমাল হয়ে যাবে।

 

৯. মিটিং

অফিসে এসেই মিটিং করতে ছোটা খুব খারাপ অভ্যাস। মিটিং দিয়ে ভুলেও দিন শুরু করবেন না।

 

জীবনের প্রয়োজনে প্রতিদিনই আপনাকে নানা ভাবে ছুটতে হয় নানা কাজে। কিন্তু আপনার কাজের প্রভাব কেবল অফিসে নয় আপনার পরিবার পর্যন্ত প্রভাব ফেলতে পারে। অতএব দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচক করুন, হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণের অভ্যেস করুন এবং নিয়মানুবর্তিতা পালন করুন। তবেই ঘরে-বাইরে আপনার সুখ সমৃদ্ধি আর শান্তি ফিরে আসবে।