অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তের কাজ

অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তের কাজ

গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনের শুটিং চলছে। অনন্তকে লাফ দিয়ে সব গুণ্ডাকে কুপোকাত করতে বলা হলো। ঠিক তখনই তাঁর চোখে ভেসে উঠল ২০১২ সালের কথা। অনন্ত তখন থাইল্যান্ডের পাতায়ায় ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবির শুটিং করছিলেন। একটা দৃশ্য ছিল এমন-ভিলেন মিশার নির্দেশে গুণ্ডারা নায়িকা বর্ষাকে বেঁধে রেখেছে। সাক্লিপ (লোহার মেশিন, যা দ্বারা ভারী বস্তু ওঠানামা করানো হয়) দিয়ে বর্ষাকে আঘাত করা হবে। ঠিক এ সময়ই নায়ক অনন্ত উড়ে এসে বর্ষাকে বাঁচাবেন। কিন্তু গুন্ডাদের একটা ভুলের কারণে দৃশ্যটি করতে গিয়ে আহত হলেন অন্তত। আরেকটু হলেই কিডনি এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যেত। গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে তাহলে অনন্ত কি গুণ্ডাদের শায়েস্তা করার ঝুঁকি নেবেন না এবার? অনন্ত দ্বিতীয়বার ভাবলেন না। কারণ অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ। লাফ দিয়ে সব গুণ্ডাকে উড়িয়ে দিলেন। দৃশ্য ওকে।

 

এই বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার অফার অনন্তকে দেওয়ার সময় গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার অ্যালেন বোনকে আসেন অনন্তর অফিসে। তিনি বলেন, আপনার সিনেমা আমি নিজে দেখি, তাই এই বিজ্ঞাপনের জন্য আপনাকেই পছন্দ করেছি। আপনিই পারবেন। আমাদের বিজ্ঞাপনের মূল থিমটা আপনাকে ভেবেই করা ‘নাথিং ইজ ইমপসিবল’। অনন্তর মিডিয়া ম্যানেজার এস এম সজীব সেখানে বসেছিলেন, তিনি বলে বসলেন, তাহলে এটার বাংলা হয় ‘অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ! এরপর মেজবাউর রহমান সুমনের পরিচালনায় দিকে দিকে মুখে মুখে ছড়িয়ে গেল অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ। বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘গ্রে’। মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, আমি চেয়েছি অনন্তকে চলচ্চিত্রে দর্শকরা যেভাবে চেনে এই বিজ্ঞাপনে তাঁকে কিছুটা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে এবং হয়েছেও তাই। গ্রামীণফোনের এই বিজ্ঞাপনে ডিওপি ছিলেন শেখ রাজিবুল ইসলাম। বিজ্ঞাপনের চিত্রায়ণ হয় বসুন্ধরার ‘জিপি হাউস’ ও তেজগাঁওয়ের কোক স্টুডিওতে।

 

অনন্ত জলিল সিনেমা থেকে বিজ্ঞাপনে কেন এলেন? এ বিষয়ে অনন্তর উত্তর, রেমন্ডের ‘আপ অ্যান্ড টপ’ বিজ্ঞাপন। এই বিজ্ঞাপনে দেখা যায় একজন সফল মানুষকে, যে পর্দার বাইরেও একজন সত্যিকারের নায়ক। মানুষটির স্বপ্ন ছিল হাজার মানুষের জন্য কিছু একটা করবেন। করলেন তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা, বিশাল গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুললেন, হলেন একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা। স্বপ্ন ছিল, পর্দায় একজন সফল নায়ক হবেন, যার জন্য ভক্তরা উন্মুখ হয়ে থাকবেন। হলেন তাই, চলচ্চিত্রের সেরাদের পুরস্কার ছিনিয়ে নিলেন, সফল নায়ক হয়ে অগণিত ভক্তের মন জয় করলেন। এই বিজ্ঞাপনে এমনই একজন সুখী মানুষের গল্প বলা হয়েছে, যার সঙ্গে অনন্ত জলিলের বাস্তব জীবন মিলে যায়। এই বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘মে ফ্লাওয়ার’। বিজ্ঞাপনের পরিচালক তানভীর শেহজাদ জানান, এটা অনন্তর নিজের জীবনের গল্প। তাই তিনি শত ভাগ দিতে পেরেছেন। গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপন, ‘আপ অ্যান্ড টপ’ কিংবা যমুনার পেগাসাস মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপন-এগুলো অনন্ত ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে মানানসই নয়। জীবনের সঙ্গে মিলে যাওয়া কাজগুলোই অনন্ত করেন। তাই পেগাসাসের বিজ্ঞাপনের জন্য অনন্তকে সরাসরি যমুনা গ্রুপের কর্তৃপক্ষ অফার করে। তারা কোনো কথা শুনবে না, অনন্তকে পেগাসাস মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপন করে দিতেই হবে। অনন্ত চিন্তা করে দেখলেন এটা করা যেতে পারে। প্রথমে তিনি তাঁর ছবির অ্যাকশন দৃশ্যের অংশবিশেষ নিয়ে একটি ডেমো তৈরি করলেন। এর পরই ‘রেড ডট’ বিজ্ঞাপনী সংস্থার গাজী শুভ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। শুভ্র বললেন, ওকে, সম্ভব। পেগাসাস মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপনটি প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে এটা হলিউডি চলচ্চিত্রের ট্রেইলর। এই বিজ্ঞাপন করতে গিয়ে চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর দাঁড়াতে গিয়ে কয়েকবার পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন তিনি। পূর্বাচল এক্সপ্রেস হাইওয়ে ও যমুনা ফিউচার পার্কের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করা হয়। বিজ্ঞাপনের ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে অনন্ত কোনো স্টান্টের সহায়তা নেননি। দুই ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত কাচের ব্রিজের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে শুট করতে গিয়ে একটি বড় কাচ ভেঙে ফেলেন অনন্ত, এতে অবশ্য তিনি আহত হননি। ৪৫ জন বিদেশি ছাড়াও এই বিজ্ঞাপনে মাফিয়াদের দ্বারা অপহৃত ছোট্ট মেয়েটির চরিত্রে মডেল হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ জেমি সিডন্সের মেয়ে অ্যালেক্স।

 

গল্পের বাইরের গল্প

 

একটি ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অনন্ত জলিলের কাছে একটি বিজ্ঞাপনের অফার নিয়ে আসে, কিন্তু কৌশলগত কারণে অনন্তকে সেই অফার ফিরিয়ে দিতে হয়। এতে অবশ্য অনন্তর কিছুটা মন খারাপ হয়। এসবের বাইরে আরো একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হন। সেটাও ছিল গ্রামীণফোনের বিনা মূল্যে ফেসবুক ব্যবহারের বিজ্ঞাপন। এখানে অ্যাকশন হিরো অনন্তকে না দেখা গেলেও ওভার ভয়েস দিয়ে সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছেন। কেননা সংলাপটা ছিল এমন ‘তো গুরু, হয়ে যাক শুরু।’