নাখালপাড়ার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ যা ছিল

নাখালপাড়ার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ যা ছিল

রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার ১৩/১ নম্বর রোডের একটি বাসা রুবি ভিলা। বাসাটির বাইরের রং আকাশি, বারান্দা গ্রিলে ঘেরা। ছাদে রয়েছে পানির ট্যাঙ্কি, তার উপরে লোহার সিঁড়ি ও পাশে দোলনা। রয়েছে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারও। দৃশ্যত ঠিকঠাক এই বাসাটিতেই জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

পঞ্চম তলায় চালানো সেই অভিযানে নিহত হয়েছে তিনজন। র‌্যাবের ভাষ্য, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে শুক্রবার দিবাগত রাত দুটটার দিকে বাসাটিতে অভিযান শুরু হয়। সেই অভিযানে জেএমবির তিন সদস্য নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় চারজনকে। বাসাটি থেকে জঙ্গিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নাশকতা চালানো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে দাবি র‌্যাবের।

এমন বক্তব্যের পর এই বাসাটিকে ঘিরেই এখন মানুষের নানা প্রশ্ন। তেজগাঁও থানাধীন সেই বাসাটিতে শুক্রবার বিকেলে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে র‌্যাব। এর পর কিছু গণমাধ্যমকর্মীকে ভবনটির ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয় র‌্যারেব পক্ষ থেকে। তাদের মধ্যে প্রিয়.কমের নিজস্ব ক্যামেরাম্যান শামীম আহমেদও ছিলেন। সময় ছিল খুবই সামান্য। বেঁধে দেওয়া সেই সময়ের মধ্যেই তিনি তুলে আনেন বেশ কিছু দৃশ্য। যে কক্ষে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটির মেঝে ভেসে গেছে রক্তে, পাশে পড়ে আছে দুটি পিস্তল। ছিল সুতলি, দীর্ঘদিনের একটি পুরাতন বটি, পাশে পানির বোতল। এসবের পাশে বালতিতে বালুর ভেতরে অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম। তবে দেয়ালগুলোতে গোলাগুলির কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কক্ষটির দেয়ালে ঝুলে আছে আয়না, তার পাশে কাপড় বা তোয়ালা রাখার হ্যাঙ্গার, আয়নার নিচে ব্রাশ ও অন্যান্য সরঞ্জাম রাখার র‌্যাক। র‌্যাকের নিচে বেসিনের অংশটি অনেক আগেই ভেঙে যাওয়ায় শুধু লেগে আছে লোহার অংশ। এসবের পাশে জানালাকে লাল, সবুজ কাগজ ও  সংবাদপত্র দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

অভিযান চালানো কক্ষটির পাশে রান্নাঘরে জঙ্গিরা গ্রেনেড রেখে বিস্ফোরণের চেষ্টা চালিয়েছিল বলে জানায় র‌্যাব। পরে অভিযানে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় বলে দাবি র‌্যাবের।  কক্ষটির পাশে রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা, চুলার পাশে একটি সয়াবিন তেলের বোতল। জানালার গ্রিলে বাসন-কোসন পরিষ্কার করার জন্য রাখা ছিল ভিম, একটি কড়াই ও গামলা। এ ছাড়াও মেঝেতে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি কালো জানালার কাঁচের টুকরা পড়ে আছে। তার পাশেই ছিল কাগজে মোড়ানো কিছু চাল। 

অন্যদিকে রান্নাঘরসংলগ্ন অভিযান চালানো কক্ষটিতে বিছানার উপরে পড়ে ছিল তোষক ও কিছু জামাকাপড়। পাশে আছে জিআই তার, সিলভার ও কালোর রঙের দুটি পিস্তল। এ ছাড়া প্লাস্টিকের ভেতরে ইহরাম বাঁধার নতুন কাপড় ছিল।

অভিযান শেষে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, অভিযান শুরু হলে জঙ্গিরা গুলি করতে শুরু করে। পরে র‌্যাব পাল্টা গুলি চালালে তিন জঙ্গি নিহত হয়।  

মাহমুদ আরও জানান, অভিযান পরিচালনার মুহূর্তে জঙ্গিরা কক্ষটির ভেতর গ্যাস ছেড়ে দিয়ে চুলার ওপর গ্রেনেড দিয়ে বিস্ফোরণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা বুঝতে পেরে দ্রুত গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেন। 

অভিযানের পর ভবনটির কক্ষ থেকে দুটি পিস্তল, তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে একটি সুইসাইডাল ভেস্ট নিহত এক জঙ্গির পেটের নিচে পড়ে ছিল বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।