বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিতে প্রযুক্তি যন্ত্রটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কলের মাধ্যমে যোগাযোগ থেকে শুরু করে স্মার্টফোনের আবির্ভাব বদলে দিয়েছে সবকিছু। বাংলাদেশে এখন মোবাইল ব্যবহাকারীর সংখ্যা (সিম ব্যবহারের ভিত্তিতে) প্রায় ১৬ কোটি। এর মধ্যে প্রায় ১৩ কোটি সিম ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোবাইলের ব্যবহারের নানা উপকারিতা রয়েছে। ঠিক উল্টো দিকও রয়েছে।
মোবাইল ও ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহারে প্রয়োজন সতর্কতা। নতুবা সামাজিক অস্বস্তিকর ঘটনার পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত বড় ধরনের ঘটনাও ঘটতে পারে।
তাই মোবাইল ব্যবহারে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে:
মোবাইলে জোরে কথা বলা
মোবাইলে কথা বলার সময় জোরে জোরে কথা বলা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। এতে আশপাশে থাকা লোকেরা বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকাবে। অনেক সময় আমরা ফোনে কথা বলার সময় ভুলে যাই, অন্যপ্রান্তের ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগত কথা বলছি। তাই কথা বলার সময় সবকিছু বিবেচনা করেই আস্তে কথা বলা উচিত।
রিংটোন বাছাইয়ে সতর্কতা
একজন ব্যক্তির মোবাইলের রিংটোন শুনলেই তার রুচিবোধ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে যাবেন। রিংটোন হিসেবে গান, ওয়াজ, আজান ব্যবহার না করাই শ্রেয়। এটি আশেপাশের লোকের বিরক্তির কারণ হতে পারে।
রিংটোনের আওয়াজ
রিংটোনের আওয়াজের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহারকারীকে সতর্কত থাকা উচিত। মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজ আশপাশের মানুষকে চমকে দিতে পারে। যতটা সম্ভব রিংটোনের আওয়াজ সহনীয় পর্যায়ে রাখুন। পাবলিক প্লেসে চলাচলের সময় রিংটোনের চেয়ে ভাইব্রেশন মোডই শ্রেয়।
ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল
নেট সহজলভ্য হওয়ায় অনেকে এর অপব্যবহার করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। হাতে স্মার্টফোন আর মোবাইলে ডাটা থাকায় যা-তা ভিডিও করে ছেড়ে দিচ্ছেন ফেসবুকে। এতে অন্যের বিরক্তির কারণ হতে পারে। আবার যেকোনো মুহূর্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়ে ক্ষণিকের বিকৃত আনন্দ আর ভুলের জন্য অন্য কারো জীবনের বিশাল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই, আপনার আনন্দের জন্য অন্যের ক্ষতি করা; বিশেষ করে নারীদের অবমাননা করা বা আইন ভঙ্গ করা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
ইন্টারনেট ব্যবহার, গোপনীয়তা
যারা ডাটা কিনে নেট চালান, তারা প্রয়োজন শেষ হলেই কানেকশন কেটে দেন। কিন্তু যারা বাসা বা অফিসে ওয়াইফাই লাইন ব্যবহার করেন তারা সার্বক্ষণিক নেটেই থাকেন। নেটে অ্যাকটিভ না থাকলেও তাদের উপস্থিতি দেখা যায়। এতে যেকোনো সময় প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে ম্যাসেঞ্জারে কল করে বসেন। কেবল তাই নয়, অনেকে ভিডিও কলও করেন। যিনি কল করছেন, তিনি বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না যে, নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলা মানে এই নয়-অন্য প্রান্তের মানুষটি চব্বিশ ঘণ্টা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন! এছাড়া ভিডিও কল করার আগে ভাবা উচিত, যাকে কল করছেন-তিনি সে মুহূর্তে তার কলটি ধরার জন্য প্রস্তুত আছেন কি না?
কাউকে আপনার দরকার? তাকে কোনো ভালো বা মন্দ সংবাদ দেবেন? সেটার জন্য তার নম্বরে যোগাযোগ করুন। যদি তার ফোন নম্বর আপনার কাছে না থাকে তাহলে আপনার বা তার পরিচিত কারো কাছ থেকে নিন। অথবা আপনি ফেসবুকে সংযুক্ত থাকলে তার ইনবক্সে গিয়ে একটা ম্যাসেজ লিখে রাখুন। তিনি নিশ্চয়ই ম্যাসেজের উত্তর দেবেন। প্রয়োজনে তার ফোন নম্বর চান। এরপর কল করে আপনার প্রয়োজনের কথাটা বলুন। এটাই ভদ্রতা আর সৌজন্য। কোনোভাবেই অনুমতি ছাড়া কাউকে ম্যাসেঞ্জারে কল না করাই ভালো। আর ভিডিও কল তো অব্যশই নয়!
ইন্টারনেটের ছবি বা ভিডিও-এর লিংকে ক্লিক
ইন্টারনেট ববহারের সময় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ছবি ও ভিডিও প্রদর্শিত হয়। এসব ছবি ও ভিডিওতে ক্লিক করার আগে ভেবে নিন। কারণ ক্লিক করার পরই আপনার মোবাইলের সবধরনের তথ্য হ্যাকারদের কাছে চলে যেতে পারে। এছাড়া সন্দেহভাজন কোনো কিছু পেলে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিরক্তিকর কনটেন্ট পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা
অন্যের ইনবক্সে বিভিন্ন ম্যাসেজ, ছবি আর ভিডিও পাঠাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন অনেকেই। যেমন- করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ, শুভ নববর্ষ, শুভ সকাল, শুভ দুপুর, শুভ বিকাল, শুভ রাত ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ক্লিপ, উদ্ভট, অসত্য, বিভ্রান্তকর বিভিন্ন সংবাদের লিংক, বিভ্রান্তিকর, অরুচিকর আর নারী অবমাননাকর বিভিন্ন ওয়াজের অংশ বিশেষও পাঠানো হয়। আপনার বা আমার পাঠানো এসব লেখা, ছবি, ভিডিও, বার্তা যাকে পাঠাচ্ছেন, তিনি বিরক্ত হতে পারেন। তাই এসব পাঠানোর আগে তার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করুন। নিজেকে সে মানুষটির জায়গায় দাঁড় করিয়ে ভাবুন।
মোবাইলফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে আমাদের সবার আরও সচেতন হওয়া জরুরি। সময় ও বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে প্রযুক্তির সঙ্গে চলতে হবে। পাশাপাশি নিজের নৈতিক উন্নতিও সাধন করতে হবে। আমার বা আপনার মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার যেন অন্য কারো জন্য বিরক্ত, বিব্রত বা ক্ষতির কারণ না হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
 
                             
  
  
                                             
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
								 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					