৩৫ কোটি নতুন পাঠ্যবই ছাপার কাজ প্রায় শেষ

৩৫ কোটি নতুন পাঠ্যবই ছাপার কাজ প্রায় শেষ

আর মাত্র কয়েকদিন। তার পরই ফুরোবে শিশুদের অপেক্ষার পালা। আগামী ১ জানুয়ারি নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে ঝকঝকে নতুন পাঠ্যবই। নতুন বইয়ের সোঁদা গন্ধে মাতোয়ারা হবে তারা। বই হাতে উল্লাস করতে করতে বাড়ি ফিরবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

তাদের জন্য ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি। এরই মধ্যে তা জেলা ও উপজেলা হয়ে পৌঁছে গেছে স্কুলে স্কুলে। অতি সামান্য কিছু বই ছাপার কাজ বাকি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় সব উপজেলায় পৌঁছে গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ কোটির মধ্যে প্রায় ৩৩ কোটির বেশি বই স্কুল পর্যায়ে বিতরণের জন্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।

অন্যান্য বইয়ের মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ কার্যক্রম ঝড়ো গতিতে এগিয়ে চলেছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার সাফল্যের সঙ্গে সময়মতো সব বই মুদ্রণ সম্ভব হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

তারা জানান, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯ কপি পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪২৮ কপি এবং প্রাথমিক স্তরের বই ১১ কোটি ছয় লাখ এক হাজার ৫২১ কপি।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের প্রায় ৯৯ দশমিক ০২ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৯৮ শতাংশ পাঠ্যবই ছাত্রছাত্রীদের বিতরণের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে এরই মধ্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বেশিরভাগ উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের চাহিদা অনুযায়ী সব বই পৌঁছে গেছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা সমকালকে বলেন, প্রায় সব বই-ই চলে গেছে স্কুল পর্যায়ে। সুখপাঠ্য বইয়ের কিছু কাজ বাকি। সেগুলোও এ মাসের বাকি দিনগুলোর মধ্যেই ছাপা হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কোটি বই ছাপা সম্পন্ন হয়েছে। এসব বই উপজেলা পর্যায়ে বিতরণও হয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর শনিবার প্রধানমন্ত্রী বই উৎসবের উদ্বোধন করবেন। আর ১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষার্থী উৎসবের মাধ্যমে বিনামূল্যে পাঠ্যবই হাতে পাবে। এ উৎসব পালনের পুরো প্রস্তুতি এরই মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল হক জানান, তার উপজেলার ৬৫০টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বইয়ের সবই উপজেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছে গেছে। আর ৬০ শতাংশ বই এরই মধ্যে স্কুল পর্যায়ে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবম শ্রেণির ‘সুখপাঠ্যকরণ’ নামে সংশোধন করা ১২টি বইয়ের মুদ্রণ কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। শিগগিরই এগুলো ছাপাতে সংশ্নিষ্ট মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগাদা দিচ্ছে এনসিটিবির পরিদর্শক দল।

নির্ধারিত সময়ের আগেই বই ছাপা, বাঁধাই ও সরবরাহ করতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির নেতারাও। তাদের দাবি, এবার বিদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ না পাওয়ায় দেশীয় ছাপাখানার মালিকরা সম্মিলিতভাবে তা সম্পন্ন করেছেন।

মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এবার বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পায়নি। বই মুদ্রণের পুরো দায়িত্বই পড়েছে দেশীয় মুদ্রণকারীদের ওপর। এ জন্য নিজ দায়িত্ব থেকেই তারা সফলতার সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের আগেই বই ছাপা, বাঁধাই ও বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণে সক্ষম হয়েছেন।

দেশের ছাপাখানার উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে তোফায়েল খান বলেন, কাগজ মিলের সক্ষমতা বেড়েছে, এর সম্প্রসারণ ঘটেছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতাও বেড়েছে। এ জন্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার কম সময়ের মধ্যে সব বই ছাপা সম্ভব হয়েছে। আশা করছি, আগামীতেও বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের বই মুদ্রণের কাজ পাবে না।

পুরো বই মুদ্রণ কার্যক্রম তদারক করছে এনসিটিবির ১৮টি কমিটি। এর একটি কমিটির আহ্বায়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের তদারকির আওতাভুক্ত দুই কোটি বইয়ের প্রায় ৯৯ শতাংশ এরই মধ্যে উপজেলা পর্যায়ের স্কুলে সরবরাহ করা হয়েছে।

সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে ঘন কুয়াশা :এনসিটিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা পাঠ্যবই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মাওয়া ঘাটে প্রায় শ’খানেক ট্রাক পাঠ্যবই নিয়ে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। ঘন কুয়াশার কারণে রাত ৯টার পরে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার সন্ধ্যার পর ট্রাক পার হতে না দিয়ে শুধু যাত্রীবাহী বাস পারাপার করা হয়। উত্তরবঙ্গে গোবিন্দগঞ্জের পরে রাতে ঘন কুয়াশার কারণে বইবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী বলেন, মাওয়া ঘাটের বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। ঘুন কুয়াশা এড়াতে ঢাকা থেকে ভোরে ট্রাক ছেড়ে দিনে দিনে তা ফেরি পার করানোর নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা আশা করছেন, এতে সমস্যা এড়ানো যাবে।