ভয়ংকর এক হ্যাকার গ্রুপ

ভয়ংকর এক  হ্যাকার গ্রুপ

এখন চোখের পলকেই ব্যাংক থেকে লুট করা হয় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। ব্যাংকে কোনো প্রকার উপস্থিতি ছাড়াই লুট হয় এসব অর্থ। আর এ ভয়ংকর কাণ্ড করে হ্যাকাররা। এসব হ্যাকারদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর একটি গ্রুপ ‘বিগল বয়েজ’। এ ভয়ংকর হ্যাকার গ্রুপটি সম্পর্কে অজানা রহস্যজনক তথ্য বের করেছে সাইবার বিশেষজ্ঞরা।

 

তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত দেশসহ বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশে সাইবার হামলা চালিয়েছিল এ হ্যাকার গ্রুপ। এসব হামলার ঘটনার তদন্তে নামে সংশ্লিষ্ট বিষয়ক সংস্থা। এ গ্রুপ সম্পর্কে যতই তথ্য মেলে, ততই অবাক হন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

 

নানা অ্যাজেন্সির তদন্তের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বিগল বয়েজ’ মূলত সাংকেতিক নাম। গ্রুপটি এতোটাই সুশৃঙ্খল, গোছানো, কৌশলী যা রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত। বিগল বয়েজ অন্যান্য হ্যাকার গ্রুপ থেকে পুরোই আলাদা। পরে একটি হ্যাকার গ্রুপটি উত্তর কোরিয়ার বলে চিহ্নিত করা হয়।

 

এফবিআইসহ নানা সিক্রেট অ্যাজেন্সির তথ্যানুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার ইন্টিলিজেন্স-এর অধীনেই পরিচালিত হয় ‘বিগল বয়েজ’। এ হ্যাকার গ্রুপ গোপনীয় কার্যকলাপের প্রতিনিধিত্বও করে।

 

২০১৮ সালে আফ্রিকায় ভয়ংকর সাইবার হামলা চালায় ‘বিগল বয়েজ’। হ্যাকার গ্রুপটি ব্যাংকের আইটি ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি সফটওয়্যার আপডেটের জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের ই-মেইল পাঠায়। আপডেট লিংকে ক্লিক করার পরই নিমিষেই ব্যাংক থেকে উধাও হয় সব অর্থ। এমন কঠিন পরিস্থিতি এড়াতে ওই ব্যাংকের সব এটিএম বুথের সব লেনদেন স্থগিত করা হয়েছিল।

 

এ ঘটনার পরই আফ্রিকার আরেক দেশ চিলিতে ব্যাংকের এক হাজার কম্পিউটার ও সার্ভারে সাইবার অ্যাটাক করে অ্যাকসেস নেয় হ্যাকাররা। সেখানে তদন্ত করতে বেরিয়ে আসে ‘বিগল বয়েজ’র নাম।

 

এ পর্যন্ত ৩০টি দেশে সাইবার হামলা করেছে ‘বিগল বয়েজ’। এমন দাবি করে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া সাইবার বিশেষজ্ঞরা ‘বিগল বয়েজে’র তৎপরতা চিহ্নিত করেছেন বলে দাবি করেন।

 

জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে হ্যাকার গ্রুপটি সাইবার হামলা শুরু করে। শুধু ২০১৮ সালেই একইসঙ্গে বিশ্বের ৩০টির অধিক দেশের ব্যাংকে অর্থ লুটের জন্য হামলা চালায় গ্রুপটি।

 

‘বিগল বয়েজ’ দুই পদ্ধতিতে সাইবার হামলা করে ব্যাংক থেকে অর্থ লুট

করে। 

প্রথমত, ফাস্টক্যাশ অর্থাৎ এটিএমগুলোতে অ্যাটাক চালিয়ে লুট করা হয় অর্থ।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক ট্রানজেকশনগুলো অর্থাৎ ব্যাংকের সুইফট টার্মিনালগুলোতে অ্যাকসেস নিয়ে ওয়্যার ট্রান্সফার করে হ্যাকার গ্রুপটি। সাইবার ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশনের তথ্যানুযায়ী, দুই ধরনের অ্যাটাকের ক্ষেত্রেই ফিশিং পদ্ধতি অবলম্বন করে এ হ্যাকার গ্রুপটি।

 

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রেসট্রাক্চার সিকিউরিটি অ্যাজেন্সি তথ্যানুযায়ী, ‘বিগল বয়েজ’ দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরির চেষ্টা করেছে। এটি হ্যাকার গ্রুপ সুনাম ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনের জন্য ব্যক্তিগত কোম্পানিতে মারাত্বকভাবে আক্রমণ করে।

 

আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ‘বিগল’ বয়েজ ক্রিপ্টোকারেন্সি (সাংকেতিক মুদ্রা) প্ল্যাটফর্ম লক্ষ্য করেই বিশাল পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সিস চুরি করে। আর একেকটি ঘটনায় খোয়া যায় শত মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের নানা দেশের প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি সাধন করেছে ‘বিগল বয়েজ’। তাদের লুট বা চুরি করা অর্থ উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।