২০ দলীয় জোটের ২০ দলীয় জোটের খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত

২০ দলীয় জোটের ২০ দলীয় জোটের খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত

* জোটের ব্যানারে প্রতিটি জেলায় সভা-সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত

* মির্জা ফখরুলের পরিবর্তে নজরুল ইসলাম খান সমন্বয়ক

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নেতারা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচনে যাবেন না তারা। জোট প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপারন বেগম জিয়াকে মুক্ত করেই কেবল নির্বাচনে অংশ নিবে। তার মুক্তির দাবিতে প্রতিটি জেলা সদরে সমাবেশ করা হবে। সেখানে জোটের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া জোটের কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে নতুন সমন্বয়ক করা হয়েছে।

শনিবার দিবাগত রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে ইত্তেফাককে একাধিক শরিক নেতা জানান।

নেতারা জানান, সবকিছুর আগে খালেদা জিয়ার মুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এজন্য বিএনপি আইনী লড়াই চালাচ্ছে। পাশাপাশি জোটগতভাবে সমন্বিত কর্মসূচী দেওয়া হবে। জেলায় জেলায় যাবেন নেতারা। পর্যায়ক্রমে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

জোটের শরিক ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে সভা-সমাবেশ করা হবে। বেগম জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না ২০দল।

এছাড়া আসন্ন পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জোটের অংশগ্রহণের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। শরিক দলগুলোর মতামত নিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের প্রতিনিধিরা দেখা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সাইফুদ্দিন মনি আরো জানান, কর্নেল অব. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি এবং জাগপা আগামী নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির জন্য প্রার্থী তালিকা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শরিক দলের কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, খালেদা জিয়া মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হবে না। কেউ তালিকাও দিতে পারবে না।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা ও কারামুক্তি নিয়ে জোটের বৈঠকে আলেচনার পর সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেগম জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না জোট।

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, আমরা জোটের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ঐক্যমতে পৌঁছেছি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই কেবল নির্বাচনে অংশ নিব। তাকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না ২০ দল। তিনি বলেন, আমরা জোটের পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে অনুরোধ জানিয়েছি বিদেশী কূটনৈতিকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠকে জোটের শরীকদেরও যেন রাখা হয়।

এদিকে বৈঠক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির আন্দোলনে ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করতে জোটের সমন্বয়কারী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে বিএনপির শরিক নেতাদের কারো কারো মধ্যে চাপা অভিমানও ছিল। একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কারণে তিনি শরিক দলগুলোর নেতাদের প্রত্যাশিত সময় দিতে পারতেন না। বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্ব ও ব্যস্ততা আরো বেড়ে গেছে। তাই জোটকে গতিশীল করতে সমন্বয়কারী হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবর্তনে নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেশি ব্যস্ত থাকেন, এ কারণেই স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, নজরুল ইসলাম খানকে বিএনপিজোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত সকলে মেনে নিয়েছে। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তিসঙ্গতকারণে হাজির না থাকলে নজরুল ইসলাম বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।

বৈঠকে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি অনেক ব্যস্ত থাকি। আপনাদের সময় দিতে পারি না। এখন থেকে জোটের সমন্বয় করবেন নজরুল ইসলাম খান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে দেড় ঘন্টার বৈঠকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান। জোট নেতাদের মধ্যে জোটের শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুল হালিম, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এমএ রকিব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লূৎফর রহমান, এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ ইসলামী পার্টির মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল কাশেম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি আব্দুর রব ইউসুফী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাপ-ভাষানীর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ পিপলস লীগের গরীব নেওয়াজ, লেবার পার্টির একটি অংশের ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং অপর অংশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক চৌধুরী প্রমুখ।