প্রোফাইল: শাহরুখ খান

প্রোফাইল: শাহরুখ খান

অনানুষ্ঠানিকভাবে এসআরকে হিসাবে ডাকা হয় শাহরুখ খানকে। একজন বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেতা, প্রযোজক, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং মানবপ্রেমিক। ১৯৮০ এর শেষের দিকে বেশ কিছু টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দিওয়ানা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি অসংখ্য বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন। শাহরুখ খান চৌদ্দবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে আটটিই সেরা অভিনেতার পুরস্কার। তিনি বলিউডের অন্যতম সফল অভিনেতা। হিন্দি চলচ্চিত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে ভারত সরকার শাহরুখ খানকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে।

 

বর্তমানে শাহরুখ খান পৃথিবীর সফল চলচ্চিত্র তারকা। তাঁর প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ভক্ত এবং তাঁর মোট অর্থসম্পদের পরিমাণ ২৩০০ কোটি রুপি-এরও বেশি। ২০০৯ সালে নিউজউইক তাঁকে বিশ্বের ৭৩ম ক্ষমতাশীল ব্যক্তির খেতাব দেয়। ওয়েলথ-এক্স সংস্থার বিচারে বিশ্বের সবথেকে ধনী হলিউড, বলিউড তারকার তালিকায় শাহরুখ খান দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি হলিউড তারকা ব্রাড পিট, টম ক্রুজ, জনি ডেপ দের পিছনে ফেলে দিয়েছেন।

 

 প্রাথমিক জীবন এবং পটভূমি[সম্পাদনা: ২০১২ সালে স্ত্রী গৌরীর সাথে খান; তিনি চলচ্চিত্র জীবন শুরু করার আগেই বিয়ে করেন। খান ১৯৬৫ সালে একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন পিতা নিউ দিল্লি, ভারতের পাঠান বংশদ্ভুত। তাঁর পিতা তাজ মোহাম্মদ খান তিনি একজন ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী ছিলেন পেশাওয়ার ব্রিটিশ ভারত থাকতে। খানের মতে, তার পৈতৃক দাদা ছিল প্রকৃতভাবে একজনআফগানিস্তান নাগরিক। তাঁর মা, লতিফ ফাতিমা, ছিল মেজর জেনারেল শাহ নওয়াজ খান জানজুয়া রাজপুত জাতি, ভারতীয় আজাদ হিন্দ ফৌজ সুবাস চন্দ্র বোস এর দত্তক মেয়ে। খানের পিতা ভারত বিভাগ হওয়ার আগে কিসা খাওয়ানি বাজার, পেশাওয়ার থেকে নয়া দিল্লিচলে আসেন। যখন তার মায়ের পরিবার রাওয়ালপিন্ডি, ব্রিটিশ ভারত থেকে এসেছিলেন। খানের শেহনাজ নামে একজন বড় বোন আছে। তাঁর জন্ম নাম শাহরুখ (অর্থ “রাজ মুখ”) ছিল নির্দিষ্ট, কিন্তু পছন্দ করে তার নাম শাহ রুখ খান লিখিত হয়, এছাড়াও সাধারণতএসআরকে হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

 

চলচ্চিত্র কর্মজীবন: ১৯৮৮ সালে ফৌজী টেলিভিশন সিরিয়ালে কমান্ডো অভিমন্যু রাই চরিত্রের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ১৯৮৯ সালেসার্কাস সিরিয়ালে তিনি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন,[ যেটি ছিল একজন সাধারণ সার্কাস অভিনেতার জীবন নিয়ে রচিত। একই বছর তিনি অরুন্ধতী রায়ের In Which Annie Gives it Those Ones টেলি-চলচ্চিত্রে গৌণ চরিত্রে অভিনয় করেন। তার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর নতুন জীবন শুরু করার লক্ষ্যে শাহরুখ নয়াদিল্লী ছেড়ে মুম্বাই পাড়ি জমান।

 

ফৌজীতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি হেমা মালিনীর চোখে পড়েন যিনি শাহ রুখ খানকে তার অভিষেক ছবি দিল আশনা হ্যায়তে অভিনয়ের সুযোগ দেন।দিওয়ানা (১৯৯২) ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রের জগতে যাত্রা শুরু করেন। এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন দিব্যা ভারতী। ছবিটি ব্যবসাসফল হয় এবং তিনি বলিউডে আসন গাড়তে সক্ষম হন। আসলে তার প্রথম ছবি হওয়ার কথা ছিল দিল আশনা হ্যায় কিন্তু দিওয়ানা প্রথমে মুক্তি পায়। একই বছরে তিনি আরও কিছু ছবি যেমন চমৎকার, বিতর্কিত আর্ট ফিল্ম মায়া মেমসাবে অভিনয় করেন।

 

১৯৯৩ সালে বাজীগর ও ডর ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিপুল খ্যাতি পান। ডর ছবিতে শাহরুখ একজন অপ্রকৃতস্থ প্রেমিক এর ভূমিকায় অভিনয় করেন, ছবিটি খুব সাফল্য লাভ করে এবং তিনি তারকা খ্যাতি পান। বাজিগর ছবির জন্য তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি কাভি হাঁ কাভি না ছবিতে একজন ব্যর্থ যুবক ও প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করেন যার কারনে তিনি সমালোচকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নির্বাচিত হন।

 

১৯৯৪ সালে তিনি আঞ্জাম ছবিতে অভিনয় করেন যেটি ব্যবসাসফল হয়নি। তবে সাইকোপ্যাথ হিসেবে তার অভিনয় সমাদৃত হয় এবং তিনি ১৯৯৫ সালেফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ ভিলেন পুরস্কার লাভ করেন।

 

১৯৯৫ ছিল তার জন্য খুব সাফল্যের বছর। দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে বক্স অফিস রেকর্ড ভাঙ্গে এবং এর সব কৃতিত্ব পান তিনি। ছবিটি ৫২০ সপ্তাহের বেশি প্রদর্শিত হয়। ভারতের সর্বাধিকবার প্রচারিত ছবি হিসেবে যাকে তুলনা করা যায় শোলের সাথে যা ২৬০ সপ্তাহ চলেছিল। ছবিটি বর্তমানে বারো বছর ধরে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং প্রায় ১২ বিলিয়ন রুপির চেয়েও বেশি অর্থ আয় করেছে।

 

খান স্বদেশ ছবির চিত্রায়নের জন্যনাসায় ২০০৪: দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গের পর তিনি বেশ কটি ছবিতে সাফল্য পান, যার অধিকাংশই ছিল প্রেম-কাহিনী। যশ চোপড়া এবং করন জোহরের সাথে মিলে তিনি বলিউডে সফলতা পেতে থাকেন। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ পরদেশ, দিল তো পাগল হ্যায় (১৯৯৭), কুছ কুছ হোতা হ্যায় (১৯৯৮),মোহাব্বতে (২০০০), কাভি খুশি কাভি গাম… (২০০১), কাল হো না হো (২০০৩) এবং বীর-জারা(২০০৪)। এছাড়া অন্যান্য পরিচালক যেমন, আজিজ মির্জারইয়েস বস (১৯৯৭), মনসুর খানের জোশ (২০০০) এবং সঞ্জয় লীলা বনসালির দেবদাস (২০০২) ব্যবসা সফল হয়।

 

আঞ্জাম (১৯৯৪), দিল সে (১৯৯৮), স্বদেশ (২০০৪) ও পহেলি (২০০৫) ছবির জন্য শাহ রুখ খান সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

 

২০০৬ সালে করন জোহরের কভি আলবিদা না কেহনা (২০০৬) ছবিটি ভারতে মোটামুটি ব্যবসা করলেও বিদেশে ব্যবসাসফল হয়। একই বছরে ডন ছবিতে অভিনয় করেন যেটিও ব্যবসাসফল হয়েছিল।

 

২০০৭ সালে শাহরুখের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল চাক দে! ইন্ডিয়া। বাণিজ্য সফল এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য শাহরুখ সপ্তমবারের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। তাঁর অন্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ওম শান্তি ওম ২০০৭ সালের সবচেয়ে বাণিজ্য সফল ছবি।

 

২০০৮ সালে শাহরুখের রব নে বানা দি জোড়ি ছবিটি খুব ভাল ব্যবসা করে ।

 

বর্তমানে সারা বিশ্বে বলিউডের জনপ্রিয়তম ব্যাক্তিত্বদের মধ্যে শাহরুখ খান অন্যতম। তাঁর অভিনীত হে রাম,দেবদাস এওং পহেলি ভারত থেকে অস্কার এ পাঠানো হয়েছিল। শাহরুখ-কাজল জুটি বলিউডের অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে স্বীকৃত। কাজলের সাথে তাঁর অভিনীত বাজীগর,দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে,করন অর্জুন, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, কাভি খুশি কাভি গাম…। এই ৫টি ছবিই ব্যবসা-সফল হয়। ২৩ বছরের অভিনয়জীবনে তিনি ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয়দের কাতারে অমিতাভ বচ্চন-এর পরবর্তীস্থান এর শক্ত দাবিদার।

 

পুরস্কার এবং মনোনয়ন

 

আন্তর্জাতিক সম্মাননা পুরস্কার পান তিনটি:

 

১। ২০০৭ – ফরাসি সরকার কর্তৃক Ordre des Arts et des Lettres (শিল্পকলা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি) উপাধি লাভ

 

২। ২০০৬ – দুবাইয়ের গভর্নর প্রদত্ত সম্মাননা

 

৩। ২০০৬ – মাদাম তুসোর মোমের জাদুঘরে স্থাপনা মুর্তি

 

ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান ১২টি:

 

১। ২০১০ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা -মাই নেম ইজ খান

 

২। ২০০৮ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – চাক দে! ইন্ডিয়া

 

৩। ২০০৪ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – স্বদেশ

 

৪। ২০০২ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – দেবদাস

 

৫। ২০০০ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, সমালোচকদের রায়ে – মোহাব্বতে

 

৬। ১৯৯৮ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – কুছ কুছ হোতা হ্যায়

 

৭। ১৯৯৭ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – দিল তো পাগল হ্যায়

 

৮। ১৯৯৫ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে

 

৯। ১৯৯৪ – শ্রেষ্ঠ ভিলেন – আঞ্জাম

 

১০। ১৯৯৩ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, সমালোচকদের রায়ে – কাভি হাঁ কাভি না

 

১১। ১৯৯৩ – শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – বাজীগর

 

১২। ১৯৯২ – শ্রেষ্ঠ উদীয়মান অভিনেতা – দিওয়ানা

 

বিশেষ পুরস্কার:

 

১। ২০০২ – ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার সুইস কনস্যুলেট ট্রফি

 

২। ২০০৩ – ফিল্মফেয়ার শক্তি পুরস্কার (যৌথভাবে – অমিতাভ বচ্চনের সাথে)

 

৩। ২০০৪ – ফিল্মফেয়ার শক্তি পুরস্কার

 

অন্যান্য চলচ্চিত্র পুরস্কার:

 

১। স্টার স্ক্রীন অ্যাওয়ার্ডস – ৭

 

২। ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস – ২

 

৩। জি সিনে পুরস্কার – ৬

 

৪। বলিউড মুভি অ্যাওয়ার্ডস – ৪

 

৫। গ্লোবাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস – ২

 

৬। রুপা সিনেগোয়ার পুরস্কার – ১০

 

৭। সানসুই ভিউয়ার’স চয়েস মুভি পুরস্কার – ৬

 

৮। আফজা পুরস্কার – ২

 

৯। আশীর্বাদ পুরস্কার – ১

 

১০। ডিজনি কিডস চ্যানেল পুরস্কার – ১

 

১১। এম.টি.ভি. পুরস্কার – ১

 

১২। স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড পুরস্কার – ১

 

১৩। সাহারা ওয়ান সঙ্গীত পুরস্কার – ১ (আপুন বোলা গানের জন্য শ্রেষ্ঠ নায়ক ও গায়ক)

 

জাতীয় সম্মাননা:

 

১৯৯৭ – শ্রেষ্ঠ ভারতীয় নাগরিক, ২০০২ – রাজীব গান্ধী পুরস্কার, ২০০৫ – পদ্মশ্রী পুরস্কার, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ সরকারী সম্মান, ২০০৭ – আওয়াদে আহমেদ ফারাহ

 

অন্যান্য:

 

১। ২০০১ – জেড ম্যাগাজিন (Jade Magazine) পুরস্কার এশিয়ার সবচেয়ে যৌনাবেদনময়ী পুরুষ,

 

২। ২০০৪ – এশিয়ান গিল্ড (Asian Guild) পুরস্মডবলিউডের যুগের শ্রেষ্ঠ তারকাgvhhgb

 

৩। ২০০৪ – পেপসি সবচেয়ে প্রিয় তারকা পুরস্কার

 

৪। ২০০৪ – ‘এফ-পুরস্কার’ ভারতীয় ফ্যাশন তারকা মডেল

 

৫। ২০০৪ – ছোট কা ফুন্ডা পুরস্কার

 

৬। ২০০৪ – টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ

 

৭। ২০০৪ – সবচেয়ে তেজ বছরের শ্রেষ্ঠ পারসোনালিটি

 

৮। ২০০৪ – এম.এস.এন. বছরের শ্রেষ্ঠ সার্চ পারসোনালিটি পুরস্কার

 

৯। ২০০৫ – ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ

 

১০। ২০০৬ – “হামীর-ই-হিন্দ” খেতাব, “দেশভক্ত” সংবাদপত্র থেকে

 

শাহরুখ-গৌরীর প্রেম কাহিনী

 

দীর্ঘদিন এক ছাদের নিচে বসবাস করে ভালোবাসা, পারস্পরিক সমঝোতা এবং বিশ্বস্ততার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সফল দম্পতি শাহরুখ-গৌরী। দিল্লির সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে গৌরী শিবারকে ভালোবেসে বিয়ে করেন শাহরুখ খান। হিন্দু রীতিতেই গৌরীর গলায় মালা পরিয়েছিলেন ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর। শাহরুখ- গৌরীর ভালোবাসার গল্প ছবির কাহিনীকেও যেন হার মানায়। শুরু থেকেই নানা বাধা আসে তাদের ভালোবাসায়। কিন্তু সব চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করে  একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়েছেন তারা। দুই ছেলে আরিয়ান, আবরাম ও মেয়ে সুহানাকে নিয়ে শাহরুখ-গৌরী খানের সুখের সংসার। তবে কিছুদিন আগে বলিউডের অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে ঘিরে শাহরুখের ঘনিষ্ঠতার খবর চাউর হওয়ায় শাহরুখ-গৌরীর সংসারে অশান্তির ঝড় উঠেছিল। শাহরুখ সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন ঠিকই। পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সমস্যা মিটিয়েছেন শাহরুখ-গৌরী। শাহরুখ-গৌরীর পরিচয় পর্বটা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। দুজনই স্কুলে পড়তেন তখন। শাহরুখের বয়স ছিল ১৯, আর গৌরীর বয়স ১৪। একটি অনুষ্ঠানে এই জুটির প্রথম সাক্ষাৎ হয়। শাহরুখ প্রথম দেখাতেই গৌরীর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে এক বন্ধুর সাহায্যে গৌরীকে পটানোর চেষ্টা করেন শাহরুখ। ওই গৌরী শাহরুখের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাননি তখন।

 

তার সঙ্গে নাচতে চান শাহরুখ। কিন্তু একবাক্যে না করে দেন গৌরী। গৌরী তার প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানায়। কিন্তু শাহরুখ আবিষ্কার করেন,  গৌরী মিথ্যা বলছে। আসলে তার ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখন। এ সময় শাহরুখ এগিয়ে গিয়ে গৌরীকে বলেন, আমিও তোমার ভাই হতে চাই। এভাবেই শুরু হয় শাহরুখ-গৌরীর প্রেমের উপাখ্যান। শাহরুখের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ালেও পরিবারের সদস্যদের তা জানাতে সাহস পাননি গৌরী। মজার বিষয় হলো, গৌরীর পায়ের সৌন্দর্য দেখে প্রথম প্রেমে পড়েছিলেন শাহরুখ খান। সে ঘোর এখনো নাকি কাটাতে পারেননি তিনি। গৌরীর বাবা ছিলেন ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণ। শাহরুখ মুসলমান। গৌরীর ভাই তাদের একসঙ্গে দেখে ফেললে সবাইকে বলে দেবে এই ভয়ে তটস্থ থাকতেন শাহরুখ-গৌরী দুজনই। একবার গৌরীর বাসায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাজির হন শাহরুখ। গৌরীর বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাব জমাতে নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি।

 

এভাবে দীর্ঘ পাঁচ বছর লুকিয়ে প্রেম করেছেন শাহরুখ-গৌরী। গৌরীকে নিয়ে অনেক বেশি কনজারভেটিভ ছিলেন শাহরুখ। এমনকি চুল খোলা অবস্থায় গৌরীকে দেখলে ভীষণ চটে যেতেন তিনি। আর বিভিন্ন পার্টিতে একটু কম বসনায় গেলে শাহরুখের মেজাজ অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। এভাবেই নানা খুনসুটির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে শাহরুখ-গৌরীর সংসার। আর এই জুটি সিক্ত অগণিত ভক্তের ভালোবাসায়।

 

বিত্তবান শাহরুখের আয়ের যত উৎস

 

ধনসম্পদের দিক থেকেও সত্যিকারের রাজা-বাদশাহর থেকে শাহরুখ খান কম কিছু নন।

 

২০১৪ সালের জরিপ সংস্থা ওয়েলথ এক্সের পরিচালিত বিশ্বের সেরা ধনী অভিনেতাদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন শাহরুখ খান। আর এ বছর তিনি রয়েছেন তৃতীয় অবস্থানে। এই তালিকায় হলিউড-বলিউড মিলিয়ে বিশ্বের তাবৎ অভিনেতাদের পেছনে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন কিং খান শাহরুখ। প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের সম্পদের মালিক তিনি। আর এ অর্থ তিনি কেবল অভিনয়ের বলেই উপার্জন করেননি। অভিনয় ছাড়াও আরও ৯টি উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন শাহরুখ। নায়ক থেকে প্রযোজক, অতঃপর পরিবেশক। আবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক শাহরুখ। কোটি কোটি রুপির ব্যবসা কিং খানের এই কেকেআর-এর মাধ্যমে। সিনেমা তৈরির থেকে বর্তমানে এর প্রচারের পেছনে প্রযোজকদের বরাদ্দ থাকে বেশি। তাই এখান থেকে শাহরুখ অর্জন করছেন প্রচুর অর্থ।  ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ চলচ্চিত্রের প্রচারে অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করে অর্থ আয়ের নতুন এক ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছিলেন শাহরুখ খান। চলচ্চিত্রটির কলাকুশলী দীপিকা পাড়ুকোন, অভিষেক বচ্চন আর বোমান ইরানিদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘স্ল্যাম! দ্য ট্যুর’ নামের কনসার্টের আয়োজন করেন শাহরুখ খান। বিশ্বের বড় বড় শহরে প্রতিটি কনসার্ট থেকে শাহরুখের আয় ছিল ৭ কোটি রুপির বেশি।

 

আর বিজ্ঞাপনের বাজারে একক রাজত্ব শাহরুখ খানের। সেটা দিন দিন আরও বাড়ছেই। টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের শতকরা ছয় ভাগ শেয়ার তার একাই। নকিয়া, পেপসি, ট্যাগ হিউয়ের, হিউন্দাই, ডিস টিভি, ডে’কর, নেরোলাক, লাক্স-এর মতো আরও অসংখ্য পণ্যের মডেল শাহরুখ খান। প্রতি বছর টিভি বিজ্ঞাপন থেকে তার বার্ষিক আয় প্রায় দেড়শ মিলিয়ন ডলার। ভারতের সবচেয়ে বেশি ব্র্যান্ড ভ্যালু তারকা শাহরুখ খান। 

 

স্যাটেলাইট স্বত্ব বিক্রি থেকেও প্রচুর উপার্জন শাহরুখ খানের। তার চলচ্চিত্রগুলোর স্যাটেলাইট স্বত্ব চড়া দামে বিক্রি করেন তিনি। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর মতো ব্লকবাস্টার হিট চলচ্চিত্রের স্বত্ব তিনি ৬৮ কোটি রুপিতে বিক্রি করেছিলেন জি সিনেমার কাছে। শর্ত ছিল চলচ্চিত্রটি যদি ১০০ কোটির বেশি আয় করে, তবে আরও বেশি অর্থ জি সিনেমাতে দিতে হবে। হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন শর্তে স্যাটেলাইট স্বত্ব বিক্রির ঘটনা ছিল এটাই প্রথম।

 

চলচ্চিত্রের লভ্যাংশের অংশীদারিত্ব থেকেও অনেক টাকা আয় করেন শাহরুখ। এই প্রথার সূচনাকারীদের একজন হলেন শাহরুখ।

 

অভিনব ব্যবসায়িক কৌশল ব্যবহার করতে দেখা যায় শাহরুখকে। প্রতিবারই চলচ্চিত্র মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন কৌশলে ব্যবসার গতি বাড়িয়ে চলেন শাহরুখ। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ মুক্তির পর দিল্লিতে দুটি টিকিট কিনলে একটি টিকিট বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ওদিকে টিকেটপ্রতি দাম মাত্র দশ শতাংশ বাড়িয়ে বিশাল অঙ্কের লাভ করেছিলেন তিনি। এ ছাড়াও কিডজেনিয়া নামের বিশ্বব্যাপী সমাদৃত শিশুদের জন্য গড়ে তোলা এক ইনডোর চেইন থিম পার্কের ভারতীয় অংশীদার ইমাজিনেশন এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডিয়াতেও বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন শাহরুখ। বিয়ের আসরের নাচিয়ে হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। চড়া পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিয়েতে নাচেন শাহরুখ খান।

 

আর বিয়েতে কেবল নিজের উপস্থিতির জন্য ১৫ হাজার ডলার নিয়ে থাকেন তিনি। আর তার পুরো একটি নাচের জন্য আট কোটি রুপির বিনিময়ে চুক্তিতে সই করেন। অনেক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছেন, বিয়ে বাড়িতে নাচের ক্ষেত্রে নিজের একাধিপত্যের বিষয়টা উপভোগই করেন তিনি। কারণ, শারীরিক অবস্থার জন্য নাচানাচির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে সালমান খানের। ওদিকে সাইফ আলী খান এবং আমির খান বিয়েতে কখনোই নাচে না। তাই এদিক থেকে শাহরুখ খান নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০১২ সালে শুধু এই খাত থেকেই বছরে ৮০ কোটি রুপি আয় করেছিলেন শাহরুখ।

 

প্রচুর অর্থবিত্তের পাশাপাশি অত্যন্ত জনপ্রিয় শাহরুখ খান বলেন, ‘জীবনটা আসলে কতগুলো অর্জন, সাফল্য, যোগ্যতা আর পুরস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জীবনকে জানো, স্বপ্ন দেখো; ব্যর্থ হলে ঘুরে দাঁড়াও। তোমার যা আছে তার উপযুক্ত মূল্য দিতে শেখো। লোকের কথায় কান দিয়ো না আর ব্যর্থতাকে ভুলে যেয়ো না। নিষ্ঠুর হলেও সেই প্রকৃত বন্ধু।’

 

সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি

 

মানবকল্যাণে দৃষ্টান্তমূলক অবদান এবং অভিনেতা হিসেবে বৈশ্বিক আবেদনের কারণে বলিউড তারকা শাহরুখ খান সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ডক্টরেট উপাধি প্রদান করেছে স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়।  রাজকুমারী এলিজাবেথের হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন শাহরুখ। বেডফোর্ডশায়ার, জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন শাহরুখ খান। অথচ শাহরুখ কিন্তু মাস্টার্সে ভর্তি হয়েও তা শেষ করতে পারেননি। অনার্স শেষে গণযোগাযোগ গবেষণা কেন্দ্রে মাস্টার্স পড়ার জন্য ভর্তি হন। চলচ্চিত্র এবং সাংবাদিকতা এ দুটি বিষয়ে তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু প্রথম বর্ষ শেষেই ভাইস প্রিন্সিপালের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে মাস্টার্স কোর্স মাঝপথেই বন্ধ করে দেন। এর আগে স্কুলে সেরা ফলাফল করার পর তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হ্যানসরাজ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকেই অর্থনীতিতে অনার্স পাস করেন শাহরুখ। এ সময় তিনি ক্রিকেট, ফুটবল এবং হকিতে বেশ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু পিঠের ব্যথা এবং আথ্রাইটিসের সমস্যার কারণে খেলাধুলা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।

 

 

 

অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননা

 

শাহরুখ খানের পুরস্কারের সংখ্যা সঠিকভাবে তিনি নিজেও হয়তো বলতে পারবেন না। যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। জীবনে অর্জন করেছেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অসংখ্য সম্মাননা। ক্যারিয়ারে মোট ৩৭৬ বার বিভিন্ন দিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন শাহরুখ। যার মধ্যে ২৭৪ বারই শাহরুখ জিতেছেন কোনো না কোনো পুরস্কার। জাতীয় পর্যায়ে আইফা, রাজীব গান্ধী, বেস্ট ইন্ডিয়ান সিটিজেন ইত্যাদি সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হন। আর ২০০৫ সালে লাভ করেন সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’। আরও রয়েছে সর্বোচ্চ ১৪টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। এ ছাড়াও স্টার, জি সিনে, গিল্ড, আইফা, স্টারডাস্ট ইত্যাদি রেকর্ডসংখ্যক পুরস্কার অর্জন করেছেন। আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘লিজিয়ান অব অনার’, মরক্কোর ‘এল’ এতোইলি ডি’অর’ সম্মাননা ইত্যাদি। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন ফেলোশিপ। একমাত্র ভারতীয় নায়ক হিসেবে হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ‘শুভেচ্ছাদূত’।