এবার ফাঁস হলো এসএসসির জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। গতকাল সোমবার জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, ঢাকার ধামরাই ও টাঙ্গাইলের সখীপুরে পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এক কিশোর ও একজন শিক্ষককে আটক, চার পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং দুজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ১১টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো।
১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর দিন থেকেই আগাম ঘোষণা দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় কয়েকজন মন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সচিবালয়ে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এই তথ্য জানান।
দুজন আটক, চার পরীক্ষার্থী বহিষ্কার
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থান থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, গতকাল প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এক কিশোর ও এক শিক্ষককে আটক এবং চার পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের জামালগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে থেকে এক কিশোরকে আটক করা হয়। পরীক্ষাকেন্দ্রের কেন্দ্রসচিবের লিখিত অভিযোগ ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টা ২০ মিনিটে কেন্দ্রের বাইরে বহিরাগত ওই কিশোর মুঠোফোনে জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পায়। সে কাগজে উত্তর লিখে কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে দিচ্ছিল। এ সময় কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য তাকে ধরে ফেলেন। তবে আটক কিশোরের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় নেওয়া হয়নি। পরে পুলিশ ওই কিশোরকে থানায় নেয়। তার কাছে পাওয়া জীববিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল রয়েছে বলে কেন্দ্রসচিব রানা কুমার সরকার তাঁর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
ঢাকার ধামরাই হার্ডিঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের কাছে পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে দুই পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্র এবং তার সমাধানসহ মুঠোফোন পাওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়। তারা সাভারের শিমুলিয়া এসপি হাইস্কুলের শিক্ষার্থী। পরীক্ষাকেন্দ্রের পাশে ইজিবাইকে বসে তারা মুঠোফোনে পড়ছিল। সন্দেহ হওয়ায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা একাডেমিক সুপারভাইজার আইরিন সুলতানা তাদের কাছ থেকে মুঠোফোন দুটি নিয়ে নেন এবং তাদের কেন্দ্রের ভেতরে নিয়ে যান। তিনি ওই রাস্তা দিয়ে অন্য একটি স্কুলের প্রশ্নপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। ইউএনও আবুল কালামকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি ওই পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেন এবং তাদের থানায় সোপর্দ করেন। পরে অভিভাবকের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত এক পরীক্ষার্থী জানায়, পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে তারা প্রশ্নগুলো মেসেঞ্জারের মাধ্যমে আরেক বন্ধুর কাছ থেকে পায়। এর আগে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নও পেয়েছিল তারা। আরেকজন জানায়, তার প্রাইভেট শিক্ষক তাকে প্রশ্নপত্র দেন।
পরীক্ষা শুরুর আগে আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর মডেল পিএম পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের মূল ফটকের সামনে কয়েকজন পরীক্ষার্থী মুঠোফোনে প্রশ্নের উত্তর দেখছিল। এ সময় তাদের কাছ থেকে মুঠোফোন নিয়ে নেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়শা জান্নাত তাহেরা। দুই পরীক্ষার্থী প্রবেশপত্র ফেলে দৌড়ে পালায়। ছিনিয়ে নেওয়া মুঠোফোনে জীববিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র ও উত্তর পাওয়া যায়। এ ঘটনায় প্রবেশপত্র ফেলে পালানো দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। কেন্দ্রসচিব কে বি এম খলিলুর রহমান বলেন, বহিষ্কৃত দুই পরীক্ষার্থী আর হলেই আসেনি। এ ছাড়া পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কেন্দ্রের বিদ্যালয় মাঠে মুঠোফোন ব্যবহার করার অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়। তাদের জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে জামতৈল ধোপাকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গতকাল আলী হোসেন (২১) নামের এক যুবককে অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কেন্দ্রসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রশ্ন ফাঁস করে সরবরাহ করায় ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই যুবককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
নাটোরের লালপুর উপজেলার থানা বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা চলাকালীন উত্তরপত্র তৈরির সময় মতিউর রহমান নামের এক শিক্ষককে আটক করেছেন ইউএনও। পরে তাঁকে লালপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
কুমিল্লার চান্দিনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে দুই তরুণকে দুই বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনেরই বয়স ১৮ বছর। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে থেকে স্মার্টফোনসহ তাঁদের আটক করা হয়। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নির্বাহী হাকিম ও চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তুষার আহমেদ তাঁদের সাজা দেন। পরে তাঁদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। নির্বাহী হাকিম তুষার আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার তরুণদের মুঠোফোনে গতকালের দুটি বিষয়ের (জীববিজ্ঞান ও অর্থনীতি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হুবহু পাওয়া যায়।
 
                             
  
  
                                             
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
								 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					