রাজধানীতে ফুলের বাজার চড়া

রাজধানীতে ফুলের বাজার চড়া

প্রিয়জনকে ফুল উপহার দিতে চান? কিংবা ফুলেল সাজে উৎসবের আমেজে ভিন্নতা আনতে চান? এবার খরচ একটু বেশিই গুনতে হবে। উৎসবের মৌসুমে ফুলের দাম এমনিতেই বেশি থাকে। তবে এবার ফুলের বাজার আরও চড়া।

ফুল ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, অসময়ে বৃষ্টি ও ফুলে ছত্রাকের আক্রমণে বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কম। তাই ফুলের দাম এ সময় অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

নগরের বহু এলাকাতেই কমবেশি ফুলের দোকান মেলে। তবে শাহবাগ মোড়, গুলশান ১ ও ২ নম্বর, বনানী, উত্তরা ও আগারগাঁওয়ে ফুল বেশি পাওয়া যায়। শনিবার বাজার ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ৫০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১৫ টাকা, প্রতিটি গাঁদার মালা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, জারবেরা ফুল ২০ থেকে ২৫ টাকা, অর্কিড স্টিক ৫০ টাকা, লিলি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস রংভেদে ১৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফুল ব্যবসায়ীরা বলেন, বছরের এ সময় গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদার চাহিদা বেশি থেকে। গত বছর এ সময় গোলাপ মানভেদে ১০ থেকে ৩০ টাকা, রজনীগন্ধা ৭ থেকে ৮ টাকা ছিল। গাঁদার দাম কম-বেশি এমনই ছিল।

নাজমা আহমেদ মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে শাহবাগের একটি ফুলের দোকান থেকে ২০টি গোলাপ, ২০টি জারবেরা ফুল এবং ৫০টি রজনীগন্ধার স্টিক কেনেন ১ হাজার ৫০০ টাকায়। অনেক দর-কষাকষির পর দোকানদার বিল্লাল হোসেন ৫০ টাকা কম রাখেন। নাজমা বলেন, ‘১০ ফেব্রুয়ারি মেয়ের জন্মদিনে সব সময়ই ফুল কিনি। কিন্তু এ বছর দামটা অনেক বেশি।’

এ বিষয়ে শাহবাগের দোকানদার বিল্লাল হোসেনের ব্যাখ্যা, উৎসবের কারণে দাম বাড়তি। আর গ্লাডিওলাস ছাড়া অন্য সব ফুলের জোগান কম। দোকানদারদের কিনতে হয় বেশি দামে। ফলে ক্রেতাদের একটু বেশি খরচ গুনতেই হবে। একই কথা আরেক বিক্রেতা মো. দেলোয়ার বললেন, ‘পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসে ফুলের দাম বেশি থাকে। এবার প্রেমিকদের খরচাটা আরও বেড়ে যাবে।’

বাংলাদেশ ফুল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, গত বছর উৎসবের এই মৌসুমে রাজধানীর বাজারগুলোতে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ গোলাপ এসেছিল। এবার সেটা ২৫ লাখ ছাড়াবে না। রজনীগন্ধার স্টিক ছিল কম-বেশি ২০ লাখ, তা এবার ১৫ লাখের নিচে। এ জন্য দাম বাড়তি।

সমিতির সহসভাপতি এ আর বাচ্চু খাঁ বলেন, বছরের শুরুতে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এ চাহিদাকে কেন্দ্র করে বাড়তি প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। কিন্তু অক্টোবরের বৃষ্টিতে সাভার, মানিকগঞ্জ, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় বীজতলায় পানি জমে প্রায় ২০০ একর জমির বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ফলন পেতে দেরি হচ্ছে। পাশাপাশি সাভারে গোলাপ বাগানে পেরোনোসপোরো ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে ফুলের জোগান কমে গেছে। আর মানুষের মধ্যেও ফুল কেনার আগ্রহ বেড়েছে।

আগারগাঁওয়ে ফুল বেচাকেনার বড় আড়তে প্রায় ২০০ দোকান রয়েছে। আড়তদার মাজহারুল ইসলাম বলেন, এখন গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গাঁদার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে জোগান কম থাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।

সাভার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের গোলাপ আসে রাজধানীতে। সাভারের বিরুলিয়া গ্রামের গোলাপচাষি মো. হারুন বলেন, ‘পোকার আক্রমণে অনেক গোলাপ গাছ মরে গেছে। যা-ও হয়েছে, মান তেমন ভালো না।’

এ বিষয়ে সাভার উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, এই শীতে পেরোনোসপোরো ছত্রাকের আক্রমণে অনেক গোলাপের গাছ শুকিয়ে মরে গেছে। এতে উৎপাদন অনেকটা কমে গেছে।