ময়লা ফেললেই জরিমানা বিমানবন্দর এলাকায়

ময়লা ফেললেই জরিমানা বিমানবন্দর এলাকায়

আপনি জানেন কি? ২০১৬ সালে পাবলিক প্লেসে ময়লা ফেলার দায়ে ২ হাজার ৯৩৯ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। দুবাইতে পথে থুথু ফেলার জরিমানাও ৫০০ দিরহাম। যা বাংলাদেশি টাকায় ১১ হাজার ৩০৪ টাকা।

 

তেমনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেখা যায়। কারণ একটা সময় ছিল যখন বিমানবন্দরে চিৎকার-চেঁচামেঁচি, ময়লা পড়ে থাকা, যাত্রী হয়রানি ইত্যাদি ছিল নিত্যকার চিত্র। এসব এখন অতীত। এর পরিবর্তে নতুন নতুন পদ্ধতি চালু, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা এবং দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতায় বদলে গেছে পুরনো দৃশ্যপট।

 

এখন বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে কোথাও ময়লা বা আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যে কেউ যে কোন সময় ফোন দিয়ে সেবা নিতে পারছেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরে গত কয়েক মাসে বেশকিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসবের সফলতাও পাচ্ছে বিমানবন্দর। এর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হচ্ছে। আগে যেখানে বিদেশীরা বিমানবন্দরে ময়লা আবর্জনা দেখে বিরক্ত হতো, তারা এখন ময়লা সংগ্রহের পদ্ধতি দেখে ‘ওহ রিসাইক্লিং’ বলে বিস্ময় প্রকাশ করছেন।

 

বিমানবন্দর এলাকার স্টেশনারি দোকানগুলোতে ঝুলছে কড়া নির্দেশনার ফেস্টুন। যেখানে লেখা রয়েছে, এয়ারপোর্ট এলাকায় যেকোন ধরণের ময়লা/বর্জ্য নির্ধারিত ডাস্টবিনের বাইরে ফেললে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলে নির্দেশনা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। একই নির্দেশনায় খাবারের পর খালি বোতল, কাপ, প্যাকেট ইত্যাদি ফেরত দিয়ে অথবা দোকানের ডাস্টবিনে ফেলে পাঁচ টাকা ফেরত নিতে বলে হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর এলাকায় সিংগারা-সমুচা জাতীয় খাবার বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

 

২০১৮ সালের প্রথম দিন থেকে এই কর্মসূচি চালু করার পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় কিছুটা সময় লাগছে। ‘ময়লা দিন টাকা নিন’ প্রজেক্ট চালুর মাধ্যমে বিমানবন্দরকে পরিচ্ছন্ন করে এরই মধ্যে সাধুবাদ পেয়েছেন এই কর্মকর্তা। এছাড়া বিমানবন্দর এলাকায় সিংগারা-সমুচা জাতীয় খাবার বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

 

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত। প্রথম দিকেই লক্ষ করেছিলাম বিমানবন্দরে এসে যাত্রী অথবা স্বজনেরা কিছু খেয়ে বর্জ্য ডাস্টবিনে ফেলছে না। ইচ্ছেমত যেখানে খুশি সেখানে বর্জ্য ফেলছে। বর্জ্যের কারণে এয়ারপোর্ট নোংরা হচ্ছিল। বাড়ছিল মাছি ও বিড়ালের উপদ্রব। তাদের মৌখিতভাবে সর্তক করলেও কোন কাজ হচ্ছিল না। তখন শুধু সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার এ প্রজেক্ট দাঁড় করালাম। আগে সিভিল এভিয়েশন দিনে তিনবার ঝাড়ু দিত পুরো বিমানবন্দর। এখন সারাদিনে একবারও ঝাড়ু দিতে হচ্ছে না।’

 

উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে গত বছরের অক্টোবরে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে অভিনব এই কৌশলের ফলে আবর্জনামুক্ত হয়ে গেছে শাহজালাল বিমানবন্দর। এখন বিমানবন্দরের ভেতর-বাহির ঝকঝকে পরিষ্কার। কেউ আর যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে না।

 

প্রকল্পটি ঘোষণা করার পরই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় বিমানবন্দরের কর্মীরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ আলোড়ন ফেলে ‘ময়লা দিন টাকা নিন’ উদ্যোগ। উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিমানবন্দরে বিপনি কেন্দ্রগুলোতে পণ্যের মোড়ক ফেরত দিলে ক্রেতাকে দেওয়া হয় পাঁচ টাকা। এই পাঁচ টাকা দোকানদার পণ্য বিক্রির সময় বাড়তি হিসেবে রাখেন। আর কুড়িয়ে পাওয়া কোনো বর্জ্য দোকানদারকে ফেরত দিলে পরিচ্ছন্ন কর্মীকে দিতে হয় ১০ টাকা। এক্ষেত্রে বাড়তি ৫ টাকার বিষয়ে ব্যাখ্যা হচ্ছে, দোকানদার হয়তো বিক্রির সময় সচেতন করেননি ক্রেতাকে, তাই আক্কেল সেলামী হিসেবে বাড়তি ৫ টাকা দিতে হবে পরিচ্ছন্ন কর্মীকে।

 

এখন বিমানবন্দরে আগত সকল যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা কিছু খাওয়ার পর খালি বোতল, কাপ, প্যাকেট ইত্যাদি ফেরত দিচ্ছে কিংবা দোকানের বিনে ফেলছে। এসব খালি বোতল, কাপ, প্যাকেট ইত্যাদি ফেলার জন্য বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত বীন সরবরাহ করেছে দেশের সর্ববৃহৎ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, অটোমোবাইলস ও টেলিকমিউনিকেশন পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপ।