নিতুন কুন্ডু

নিতুন কুন্ডু

নিতুন কুন্ড একজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা ও উদ্যোক্তা। তাঁর পুরো নাম নিত্য গোপাল কুন্ড। তিনি সাবাশ বাংলাদেশ, সার্ক ফোয়ারা প্রমূখ বিখ্যাত ভাস্কর্যের স্থপতি। তাঁর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি ১৯৪২ সালে স্থানীয় বড়বন্দর পাঠশালায়। ১৯৪৭ সালে ভর্তি হন দিনাজপুর শহরের গিরিজানাথ হাইস্কুলে। ১৯৫২ সালে তিনি মেট্রিকুলেশন পাস করেন

প্রাথমিক জীবন :

নিতুন কুন্ডর জন্ম দিনাজপুরে। তিনি পড়ালেখা করেছেন তদানীন্তন ঢাকা আর্ট কলেজে (বর্তমানের চারুকলা ইনস্টিটিউট)। সেখান থেকে তিনি ১৯৫৯ সালে চিত্রকলায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান :

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিতুন কুন্ড যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জনসংযোগ বিভাগে তিনি কর্মরত ছিলেন। কামরুল হাসানের সাথে মিলে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে পোস্টার ডিজাইন ও অন্যান্য নকশা প্রণয়ন করেন। তাঁর প্রণীত পোস্টারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী ও বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধা।

স্বাধীন বাংলাদেশে নিতুন কুন্ড ১৯৭৫ সালে অটবি লিমিটেড নামক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনে তাঁর নকশা স্থান পেয়েছে। ১৯৭০ সালে তোপখানা রোডে বিখ্যাত বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে অটবি নামে বর্তমান সময়ের বিখ্যাত শিল্প প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন তিনি। অটবি এখন চমৎকার শিল্পরূপ নিয়ে ফার্নিচার শিল্পের এক অনন্য উদাহরণ। ১৯৫৯ সালে নিতুন কুন্ড তার জীবন শুরু করেছিলেন ডিজাইনার হিসেবে। ১৯৬২ সালে ইউনাইটেড স্টেটস ইনফরমেশন সার্ভিসেস (ইউসিস) প্রধান ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইউসিসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তিনি। পরে শিল্পী কামরুল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর নানা ধরনের অঙ্কনের কাজ করেন। নিতুন কুণ্ডু মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী হিসেবে ব্যাপক আলোচিত। মূলত ভাস্কর্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহের শেষ ছিল না তার। শিল্পী হওয়ার নেশায় ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর আজীবন একজন শিল্পী হয়েই থাকার প্রবল ইচ্ছা ছিল। তাঁর শিল্পের সর্বোচ্চ মিনারে অবস্থান করা এই শিল্পী ১৯৯৭ সালে অর্জন করেছিলেন একুশে পদক। তার হাতে গড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান অটবি ত্রিশ বছর অতিবাহিত করেছে। অটবি ছাড়াও নিতুন কুন্ড নিজেই একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম :

সার্ক ফোয়ারা, ঢাকা (১৯৯৩), প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলের সামনে অবস্থিত।

শাবাশ বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২)

কদমফুল ফোয়ারা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

মুর‌্যাল (পিতল), পাকিস্তান এয়ারলাইন অফিস, হোটেল শেরাটন, ঢাকা

ম্যুরাল (তেল রং) জনতা ব্যাংক, ঢাকা

ম্যুরাল (কাঠ, লোহা, পিতল) মধুমিতা সিনেমা হল, ঢাকা

সাম্পান, ঐতিহ্যবাহী নৌকার প্রতীক, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর (২০০১)

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সম্মুখে ফোয়ারা নির্মাণ।

উল্লেখযোগ্য কাজ :

স্বাধীনতা যুদ্ধের পোস্টার ডিজাইন (১৯৭১)

ইন্দিরা মঞ্চ, (স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত মঞ্চ) ঢাকা (১৯৭২)

বিভিন্ন জাতীয় ট্রফির (প্রতিযোগিতার পুরস্কার) নকশা ও নির্মাণ

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ

বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ি পুরস্কার

প্রেসিডেন্ট শিশু-কিশোর ফুটবল কাপ

শিল্পমেলা ট্রফি

এশিয়া কাপ ক্রিকেট পুরস্কার

একুশে পদক 

বায়তুল মোকাররম মসজিদের অভ্যন্তরের লাইটিংয়ের কারুকাজ

পুরস্কার :

একুশে পদক

ডেইলি স্টার-ডিএইচএল শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা পদক

জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার ১৯৬৫

দেহাবসান :

২০০৬ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর নিতুন কুণ্ডু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে ১৫ই সেপ্টেম্বর সকালে তিনি বারডেম হাসপাতালে মারা যান। ১৬ই সেপ্টেম্বর পোস্তগোলা শ্মশানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।