ফিল্ম রিভিউ: নাম শাবানা

ফিল্ম রিভিউ: নাম শাবানা

একটা ছোট্ট গাডারকে টেনেটেনে আপনি যদি লম্বা করতে যান কী হবে? সেটা ছিঁড়ে যাবে। এই ছবির অবস্থাও একই। একটা শর্টফিল্ম গোছের ছবিতে টেনে টেনে বাড়িয়ে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি বানাতে গিয়েছেন পরিচালক। ব্যস পুরোটাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যা তা অবস্থা আর কি। বেবি ছবিতে কাঠমণ্ডুর হোটেলে একটা ছোট অ্যাকশন দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল তাপসীকে। তাপসীর অ্যাকশন স্টান্ট সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। আর সেই প্রশংসাই একটু বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছেন তাপসী ও নাম শবনম ছবির পরিচালক । তাই ২ মিনিটের অ্যাকশনের জায়গায় পুরো ১৪৮ মিনিট সমর্পন করা হয়েছে তাপসীর অ্য়াকশনের জন্য।

পটভূমি

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় দিনের আলোয় ভারতের দুই সিক্রেট এজেন্টের খুন হয়। কাট পরের শটেই মুম্বইয়ে দেখানো হয় সাবানা খানকে (তাপসী পান্নু)। যার জীবন মা আর কুডো প্রশিক্ষণ ঘিরেই। শাবানা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আবেগে ভাসার মেয়ে সে নয়। কলেজের বন্ধু জয় (তাহির সাব্বির মিঠাইওয়ালা) শাবানার প্রেমে পাগল কিন্তু শাবানা তাকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু চড়াই উতরাইয়ের পর শাবানা আর জয়ের প্রেমপর্ব ঠিক শুরুই হবে এমন সময় ইভ টিজিংয়ের শিকার হয় শাবানা এবং প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হতে হয় জয়কে। মৃত প্রেমিকের মৃত্যুর বিচার চাওয়ায় সিক্রেট এজেন্সির থেকে একের পর এক রহস্যজনক ফোন আসতে শুরু রে শাবানার কাছে। তারা শাবানাকে দলে যোগ দিতে বলে, বদলে জয়ের খুনিদের ধরতে তারা সাহায্য করবে বলে প্রস্তাব দেয়। শাবানা যোগ দেয়। এরপর তাকে অজয় রাজপুতের (অক্ষয় কুমার) সহকারী হিসাবে আন্তর্জাতিক অস্ত্র মাফিয়া টনি/মিখাইলকে (পৃথ্বীরাজ সুকুমারন) ধরতে মালয়শিয়ায় পাঠানো হয়। বাকিটুকু নয় থিয়েটার হলের জন্যই তোলা থাক।

পরিচালনা 

এককথায় বলতে গেলে চরম ও তীব্রভাবে হতাশ করেছেন লেখক নীরজ পাণ্ডে। অক্ষয়কুমার অভিনীত বেবি ছবিতে নিজের দক্ষতা দেখিয়েছিলেন লেখক নীরজ পান্ডে এই ছবিতে তার সেই দক্ষতার উপরই নিজের হাতে প্রশ্নচিহ্ন লাগিয়ে দিলেন নীরজ। শুধু একটা ছবি তৈরি করতে হবে বলে দায়সারা গোছের দুর্বল চিত্রনাট্য নিয়ে এই ছবি তৈরি করা বলেই মনে হয়েছে প্রতি পদে পদে। তবু পরিচালক শিবম নায়ার বহু চেষ্টা করেছেন চিত্রনাট্যের ত্রুটিগুলি ঢাকতে, কিন্তু পারেননি। উল্টে অযথা বিনা কারণে ছবি মাঝে মধ্যে যেখানে সেখানে টুকরো টুকরো গান ঢুকিয়ে দর্শকের স্য়ারিডনের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

অভিনয় 

ছবির নামই বলে দেয় এই ছবিটা শুরু থেকে শেষ শাবানাকে নিয়ে অর্থাৎ তাপসীকে নিয়ে। অ্যাকশন দৃশ্য় মন্দ করেনন না তাপসী, এছবিতেও বেশ ভাল কিছু অ্যাকশন দৃশ্য দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আবেগের দৃশ্য তিনি কেঁদেছেন, নাক দিয়ে মুখ দিয়ে জল ফেলেছেন ঠিকই কিন্তু তবুও অভিনয় দিয়ে মনে ধাক্কা দিতে পারেননি। এই দৃশ্যগুলিতে পরিচালকের আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। মনোজ বাজপেয়ী বড় মাপের অভিনেতা। তাঁকে ঠিক যতটা বলা হয়েছে তিনি করেছেন। কিন্তু চিত্রনাট্যের দোষেই হোক বা অন্যকিছু মনোজ বাজপেয়ীর অভিনয়তেও কোথাও যেন খামতি রয়ে গিয়েছে। মুখ্য খলনায়কের চরিত্রে পৃথ্বীরাজকে খুব একটা প্রভাবশালী বা শক্তিশালী কোনওটাই লাগেনি। বরং দেখে মনে হয়েছে ছবিতে ভিলেন হয়ে যেন ফেঁসে গিয়েছেন তিনি। ভিলেন মনে না হলেও হ্যান্ডসম পৃথ্বীরাজ কিছু কিছু দৃশ্যে মন কেড়েছে নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে। বেবি ছবির নানা চরিত্রকে ছোট ছোট দৃশ্যে তুলে আনা হয়েছে। আর সেটাই সবচেয়ে বড় ভুল পরিচালকের। এই চরিত্রগুলি এনে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে বেবির তুলনায় নাম শাবানা ছবির গুণগত মান কতটা নিচে।

সবশেষে,

যারা বেবি দেখার পর মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং যারা বেবি-র মতো প্রত্যাশা নিয়ে নাম শবানা দেখতে যাবেন, তাদের জন্য এই ছবি চরম হতাশার। এই ছবি দেখতে হলে ঢোকার আগে ডিসপিরিন, স্যারিডন আর কয়েক কাপ কফি মাস্ট।