গুগলের পৃষ্ঠপোষকতায় উড়ুক্কু ট্যাক্সি

গুগলের পৃষ্ঠপোষকতায় উড়ুক্কু ট্যাক্সি

জ্যামে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত? উড়ুক্কু গাড়ির কথা হয়তো এত দিন শুনে এসেছেন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে পড়েছেন কিংবা চলচ্চিত্রে দেখছেন। বাস্তবে এবার সত্যিই উড়ুক্কু যানের দেখা মিলবে। মার্কিন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ উড়ুক্কু ট্যাক্সি তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। গুগলের পৃষ্ঠপোষকতার কিটি হক নামের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে উড়ুক্কু ট্যাক্সি। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে এ উড়ুক্কু গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে।

 

ধারণা করা হচ্ছে, নতুন এই উড়ুক্কু যান ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে। কারণ, এ গাড়িগুলো চালকবিহীন।

 

গত মঙ্গলবার নিউজিল্যান্ডের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ল্যারি পেজের কোম্পানি কিটি হকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জেফায়ার এয়ারওয়ার্কসের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। ভবিষ্যতের উড়ুক্কু গাড়ি তৈরি ও পরীক্ষা করার অনুমতি পাওয়ায় এখন সেখানে উড়ুক্কু গাড়ি দেখা যাবে।

 

কিটি হকের তৈরি ওই উড়ুক্কু গাড়ির নাম হবে ‘কোরা’। এর পাখায় এক ডজন ছোট রোটর রয়েছে। এর ফলে এটি হেলিকপ্টারের মতো খাঁড়াভাবে ওঠানামা করতে পারবে। তবে এর নির্মাতারা বলছেন, কোরাতে হেলিকপ্টারের মতো শব্দ হয় না। অর্থাৎ কম শব্দের এ উড়ুক্কু গাড়ি শহরাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার করা যাবে। বাড়ির ছাদ বা গাড়ি রাখার জায়গায় এটিকে নামানো যাবে।

 

জেফায়ারের প্রধান নির্বাহী ফ্রেড রেইড বলেন, ‘আমরা দূষণমুক্ত, কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনমুক্ত নির্ভরযোগ্য যান তৈরি করছি। পরিবহন দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটানোর এটাই যৌক্তিক পরবর্তী পদক্ষেপ।’

 

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডে কোরার একটি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। এতে যানটির ভেতর তিনটি কম্পিউটার রাখা ছিল, যা এর পথ নির্ধারণ করে। এ ছাড়া এতে দুজন যাত্রী বহন করা হয়। এ যন্ত্রটি নিজ থেকেই চলতে পারে। তবে কোনো বিপদের শঙ্কা থাকলে নিরাপত্তাব্যবস্থা হিসেবে প্যারাস্যুট ব্যবহার করা হয়। এ যানটি আগে ‘জি ডট অ্যারো’ নামে পরিচিত ছিল। এটি ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ তিন হাজার ফুট উঁচুতে উঠতে পারে। জেফায়ার দাবি করেছে, তাদের তৈরি উড়ুক্কু যান চালানো খুব সহজ। এটি যাত্রীদের জন্য সাধারণ অভিজ্ঞতা দেবে।

 

তাদের এক ভিডিওতে বলা হয়েছে, এ যান চালাতে কিছু জানা লাগবে না। এটি পুরোপুরি বৈদ্যুতিক হওয়ায় পরিবেশবান্ধব।

 

গত বছরে কিটি হক যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফ্লেয়ার’ নামের ব্যক্তিগত একটি উড়ুক্কু গাড়ি তৈরির কথা জানিয়ে ছিল। তবে ওই গাড়ি দেখে শুধু বিনোদন উপলক্ষে তৈরি—এমনটাই ধারণা হয়। তবে কোরা দেখতে প্রচলিত যানের মতো। কারণ এর পাখা, লেজ ও যাত্রীদের জন্য বসার জায়গা মিলিয়ে ১১ মিটার জায়গা আছে।

 

এটি কি ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া যাবে? এ ক্ষেত্রে দুঃসংবাদ শোনাচ্ছেন নির্মাতারা। এর পরিবর্তে এ ধরনের যান যাত্রীসেবায় ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। কোথাও যেতে যাত্রীদের এ ধরনের উড়ুক্কু যান ভাড়া নিতে হবে। জেফায়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাইড শেয়ারিং সেবা উবারের মতো করে এ উড়ুক্কু যান চালানো হবে। তারা একটি অ্যাপ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী চাইলে মোবাইল ফোন থেকে এ যান ভাড়া করতে পারবেন।

 

কোরা নামের এ যানের উন্নয়নে আট বছর ধরে কাজ করেছেন গবেষকেরা। তবে এটি পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন ছিল তাঁদের। নিউজিল্যান্ডের যানজটমুক্ত পরিবেশ তাই তাঁদের পছন্দ ছিল।

 

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় এ উড়ুক্কু যান পরিচালিত হবে। এ প্রসঙ্গে সেখান মেয়র লিয়ানি ড্যালজিয়েল বলেছেন, বৈশ্বিক যানজট সমস্যার প্রতিরোধ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি তৈরিতে এ উড়ুক্কু যান পরিবহন ইকোসিস্টেমে বিপ্লবের বিষয়টি তুলে ধরে।

 

১৯৯৮ সালে ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন মিলে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির একটি গ্যারেজে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন এবং একে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কোম্পানি রূপান্তর করেন। পেজ গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কিটি হক ও কোরা নামের নতুন প্রকল্পগুলো নিজ উদ্যোগে করছেন। অ্যালফাবেটের পরিচালনার সঙ্গে একে যুক্ত করেননি। রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনবিসি অবলম্বনে