কিভাবে মেয়েরা পকেট মারে? জানেন?

কিভাবে মেয়েরা পকেট মারে? জানেন?

দিল্লি মেট্রো রেলে মহিলা পকেটমারদের দৌরাত্ম্য ক্রমশই বাড়ছে৷ এদের সহজ শিকার সাধারণ যাত্রী৷ মহিলা বলে তাদের ধরাও মুশকিল৷ কিন্তু দিনের পর দিন যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ এক বিশেষ অভিযান শুরু করেছে৷

 

অভিযান চালিয়ে একটা দলকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গয়নাগাটি, দামি মোবাইলসহ প্রায় ২৫ লাখ রুপির মালকড়ি৷ দিল্লির মেট্রোতে উঠে হঠাৎ যদি দেখেন আপনাকে ঘিরে রয়েছে একদল মহিলা, তাদের মধ্যে কেউ হয়ত আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, অজ্ঞান হয়ে গেছে, তাহলে সাবধান৷ মানবিক তাগিদে ওদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার আগে

 

নিজের পকেট বা ব্যাগের দিকে নজর রাখুন৷ সতর্ক হোন৷

 

আগলে রাখুন আপনার টাকাকড়ি, গয়নাগাটি এবং মোবাইল৷ কারণ, আপনি হয়ত জানেন না, মহিলা পকেটমারদের নিশানায় রয়েছেন আপনি৷ দিল্লির মেট্টো রেলে, বিশেষ করে লেডিজ কোচে সক্রিয় এমনি এক নারী পকেটমার-চক্র৷ দিনের পর দিন অভিযোগ আসতে থাকায় দিল্লি পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে এমনি এক নারী পকেটমার চক্রের সন্ধান পায়৷

 

গ্রেফতার করা মহিলা পকেটমার চক্রের কাছ থেকে পাওয়া যায় সোনা, হিরে এবং দামি মোবাইলসহ প্রায় ২৫ লাখ রুপির জিনিষপত্র৷ গ্রেফতার হওয়া দুই তরুণীর একজনের নাম ক্যাটারিনা। বয়স বছর ২৫৷ অন্য জনের নাম বর্ষা৷ বয়স বছর ২২৷

 

পুলিশের জেরায় ওরা জানায়, দিল্লি মেট্রোয় পকেটমারের কাজে তাদের হাতেখড়ি হয় ৩০ বছর বয়সি লক্ষ্মীর কাছে৷ ওরা আরো জানায়, গোটা দশেক যুবতী মেয়েকে নিয়ে মেট্টোয় পকেটমারের জন্য একটি দল বানায় লক্ষ্মী৷ এমন নিখুঁতভাবে এরা হাত সাফাই করার ট্রেনিং পেয়েছে যে, কেউ টেরই পেত না৷

 

পেলেও যুবতী মেয়ে বলে চট করে গায়ে হাত দিতে সাহস পেত না৷ দিল্লি মেট্রোর পুলিশকর্তা পঙ্কজ কুমার সিং ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রথমে এদের শনাক্ত করে৷ তারপর মোতায়েন করেন সাদা পোশাকে সাধারণ যাত্রীর সাজে দিল্লির মহিলা পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড৷

 

বড় বড় মেট্টো স্টেশনে, বিশেষ করে অফিস টাইমে যখন অত্যধিক ভিড়ে পকেটমার বেশি হয়, তখনই নেমে পড়েন তারা৷ কনটপ্লেসে রাজীবচক, কাশ্মীরি গেট, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট, মান্ডি হাউস, ইন্দ্রলোক, কীর্তিনগরের মতো ইন্টারচেঞ্জ স্টেশনগুলিতে দেখা যায় তাদের৷

 

পুলিশের জেরা এবং তদন্তে আরো জানা যায়, ১০ জনকে নিয়ে একটা দল গঠন করে দু-তিনটা দলে ভাগ হয়ে যায় এই মহিলা পকেটমাররা৷ দুই একজনের কোলে বাচ্চাও থাকে যাতে তাদের কেউ সন্দেহ করতে না পারে৷ যাকে টার্গেট করা হয়, ভিড়ের সুযোগ নিয়ে, তার পাশে গিয়ে গা ঘেঁষে বসে পড়ে৷

 

তারপর সুযোগ বুঝে টাকা, গয়না বা অন্য দামি জিনিষ হাত সাফাই করে সঙ্গে সঙ্গে দলের অন্য মেয়েদের কাছে চালান করে দেয়া হয়, যাতে তল্লাশি নেয়া হলেও তার কাছে কিছুই পাওয়া না যায়৷ কেন্দ্রীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে এইরকম চুরি যাওয়ার ঘটনায় ১১ হাজার অভিযোগ (এফআইআর) দায়ের করা হয় দিল্লি মেট্টো পুলিশের কাছে৷

 

গত বছরে মেট্রো রেলে পকেটমারদের ৯০ শতাংশ মহিলা৷ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ৪৩৮ জন মহিলা এবং ৪১ জন পুরুষ পকেটমার৷ মহিলা পকেটমারদের দৌরাত্ম দমনে সিআইএসএফ বিশেষ অভিযান চালিয়েছে৷ পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, দিল্লি মেট্টোর মহিলা পকেটমারদের ঘাঁটি দিল্লি শহরের উপান্তে কাঠপুতলি বস্তিতে৷

 

এইসব মহিলা পকেটমারের বেশিরভাগ রাজস্থানের এক যাযাবর উপজাতি গোষ্ঠীর, যারা একসময়ে কাঠের তৈরি পুতুলনাচ দেখিয়ে বেড়াত৷ সেই থেকে এরা কাঠপুতলি নামেই পরিচিত৷ আগে এরা থাকত ইটের বাড়িতে৷ সম্প্রতি দিল্লি পৌরসভা অবৈধ নির্মাণ সব ভেঙ্গে দিলে, এরা বস্তিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়৷

 

দিল্লি মেট্রোয় মহিলা পকেটমার প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে সমাজবিজ্ঞানি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এক হচ্ছে মহিলাদের সন্দেহ কম করা হয় বলে তাদেরই এইসব কাজে বেশি লাগানো হচ্ছে৷ তার মানে এই নয় যে, তারা অপরাধপ্রবণ বেশি৷ দ্বিতীয়ত, তারা নিজেরাই অপরাধের শিকার৷ তারা নিজেরাই পাচার হয়ে যাচ্ছে৷

 

নাবালিকাদের বেশ্যাপল্লিতে নিয়ে আসা হয়৷ সেই কাজেও হয়ত কোনো মহিলা যুক্ত৷ মহিলা বলে তাদের হৃদয়টা নরম, এটা মনে করারও কারণ নেই৷ তবে হ্যাঁ, খুনখারাপির মতো নৃশংস অপরাধ তারা সাধারণত করে না, সেটা বেশির ভাগ করে থাকে পুরুষরা৷

 

আর একটা কথা, যে মহিলা পকেট মারছে, সে কিন্তু নিজে মনে করে না সে কোনো অপরাধ করছে৷ সে মনে করে, এটা তার রোজগার, তার জীবিকা. এইসবের পেছনে বড় সামাজিক যে কারণটা রয়েছে, সেটা হলো চারপাশের ভোগবাদ৷ যত টাকা আয় হলে তার জীবন চলে যায়, তার চেয়ে বেশি সে চায়।

 

তাই হয়ত মেয়েদের মধ্যে বাড়ছে দেহব্যবসা৷ যেমন ধরুন, আপনি একটা সাধারণ মোবাইলে সন্তুষ্ট নন, আপনি চাইছেন অনেক দামি আইফোন- এটার কোনো শেষ নেই৷ তাই সম্ভবত ক্রাইমও বেড়ে চলেছে”, ডয়চে ভেলেকে বললেন সমাজবিজ্ঞানী দেবদাস ভট্টাচার্য৷